স্পোর্টস ডেস্ক:
ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলে এক তরুণ মুখ বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই যিনি হয়ে উঠেছেন মিডল অর্ডারে এক আস্থার প্রতীক এবং উইকেটের পেছনে নির্ভরতার প্রতিমূর্তি—তিনি জেমি স্মিথ। সদ্য সমাপ্ত হেডিংলেতে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচে তার দৃঢ় ব্যাটিং এবং চাতুর্যময় উইকেটকিপিং নজর কেড়েছে সকলের। শুধু একটি ইনিংস নয়, সামগ্রিক পারফরম্যান্সেই প্রমাণ রাখছেন যে, তিনি ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ভবিষ্যতের অন্যতম স্তম্ভ।
স্মিথের ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয়েছিল সারে ক্লাব থেকে। সেখানকারই প্রোডাকশন লাইনের আরেক গর্ব তিনি। শুরু থেকেই তার ব্যাটিং গড়ন ছিল পরিণত, বলের টাইমিং ছিল নিখুঁত এবং গ্লাভসের পেছনে তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল প্রশংসনীয়। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আত্মপ্রকাশের পরই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তিনি শুধু প্রতিভাবান নন, বরং চাপ সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মনোভাব রাখেন।
২০২৫ সালের গোড়ার দিকে ইংল্যান্ড দলে টেস্ট অভিষেকের সময়ই তিনি জানিয়েছিলেন, “চাপ যখন বেশি থাকে, তখন নিজেকে প্রমাণ করার সবচেয়ে বড় সুযোগ তৈরি হয়। সেই জায়গাটা আমি কাজে লাগাতে চাই।” নিজের কথা রাখতেও বেশি সময় নেননি। প্রথম চারটি টেস্টেই এক শতক ও একটি ৯৫ রানের ইনিংস দিয়ে ব্যাট হাতে জানান দেন, তার মধ্যে বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষ করে ম্যানচেস্টার টেস্টে করা তাঁর ১১১ রানের ইনিংসটি ৯৪ বছরের পুরনো এক রেকর্ড ভেঙে দেয়। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ কিপার-ব্যাটার হিসেবে টেস্ট শতক করার গৌরব অর্জন করেন স্মিথ, যা পূর্বে ছিল কিংবদন্তি লেস অ্যামস-এর।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিংয়েও তিনি দেখিয়েছেন দারুণ নিষ্ঠা। ‘স্টাম্প মাইকে’ তেমন শব্দ না করেও সতীর্থদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেভাবে তিনি পুরো ইনিংসের নেতৃত্বে সাহায্য করেছেন, তা প্রশংসিত হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের কাছেও। সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকাররা বলছেন, তার কিপিং স্টাইল অনেকটাই ‘কোয়াইট বাট ইফেকটিভ’—শব্দহীন কিন্তু প্রভাবশালী।

তবে কেবল মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও জেমি স্মিথ একটি স্থির ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। তার পার্টনার কেটের সঙ্গে প্রথম সন্তানের প্রত্যাশার খবর তিনি শেয়ার করেছিলেন এক সংবাদ সম্মেলনে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্মিত হেসে বলেছিলেন, “চারটি জাম্পার পরে ঠান্ডায় বসে ছিলাম, তখনই এই খবর পেলাম। আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি।” পারিবারিক জীবনের স্থিরতা এবং মাঠের প্রফেশনাল চাপ—দু’টিকেই সমান্তরালে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি, যা একটি পরিণত মনের পরিচয় দেয়।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস কিংবা কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, দুজনেই স্মিথকে ‘ব্যাজবল’ ঘরানার খেলোয়াড় হিসেবে দেখেন। দ্রুত রান, মাঠে আক্রমণাত্মক মানসিকতা এবং পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা—এই সব গুণই তাকে ইংলিশ দলে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে।
আগামী অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি ইংল্যান্ড দলে থাকবেন—এতে কোনও সন্দেহ নেই। সেই সিরিজকে ঘিরেই স্মিথ সম্প্রতি বলেছিলেন, “একটি অ্যাওয়ে অ্যাশেজ জয় প্রতিটি ইংলিশ ক্রিকেটারের স্বপ্ন। আমিও সেই স্বপ্ন বুকে নিয়েই এগোচ্ছি।”
জেমি স্মিথ এখন আর শুধুই একজন তরুণ সম্ভাবনাময় প্রতিভা নন, বরং ইংল্যান্ড ক্রিকেটের আত্মবিশ্বাসী ভবিষ্যৎ। আর প্রতিটি ইনিংসে, প্রতিটি ক্যাচে, প্রতিটি মুহূর্তে তিনি সেই আস্থার ইট গেঁথে চলেছেন।