বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন হত্যার ঘটনায় মাহির রহমান নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার ভোরে বংশাল থানা পুলিশ রাজধানীর পুরান ঢাকা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে রোববার বিকেলে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় টিউশনিতে যাওয়ার সময় খুন হন জোবায়েদ হোসেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে, এটি একটি প্রেমঘটিত হত্যাকাণ্ড।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা জানিয়েছেন, তার সঙ্গে মাহির রহমানের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের পরিচয় শৈশব থেকে, পাশাপাশি বাড়িতে বেড়ে উঠেছিলেন দুজনেই। বর্ষা পড়াশোনা করছিলেন ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে, আর মাহির ছিলেন বোরহানুদ্দীন কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র।
ওসি জানান, প্রায় ৯ বছর ধরে তাদের প্রেম চললেও সম্প্রতি সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়। কিছুদিন আগে সম্পর্ক ভেঙে গেলে বর্ষা মাহিরকে জানান, তিনি জোবায়েদকে পছন্দ করেন। এতে রাগে ও ক্ষোভে মাহির রহমান তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে জোবায়েদকে হত্যা করেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, “বর্ষা স্বীকার করেছেন, তিনি মাহিরকে বলেছিলেন যে জোবায়েদকে পছন্দ করেন, তবে বিষয়টি জোবায়েদকে কখনো জানাননি। তদন্তে জানা গেছে, জোবায়েদ ও বর্ষার মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না, এমনকি তাদের মধ্যে কোনো ঘনিষ্ঠ বার্তালাপও পাওয়া যায়নি।”
ওসি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় বর্ষার মধ্যে কোনো কান্না, অনুশোচনা বা নার্ভাসনেসের লক্ষণ দেখা যায়নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন শান্ত ও চিন্তামুক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনার পেছনের কারণ ও পরিকল্পনা জানতে আরও বিস্তৃত তদন্ত চলছে।
রোববার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে বর্ষার বাসার তৃতীয় তলায় ছুরিকাঘাতে খুন হন জোবায়েদ। সিঁড়ির নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত রক্তের দাগ ছিল এবং তৃতীয় তলায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিল তার মরদেহ। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এরপর রাত ১১টার দিকে পুলিশ ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে নিজ বাসা থেকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার ভোরে মাহির রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত জোবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে বংশাল থানার সামনে বিক্ষোভ করে এবং তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।










