Home সারাদেশ টুপামারী পুকুর: কুড়িগ্রামের বুকজুড়ে এক নিরব সৌন্দর্যের নাম

টুপামারী পুকুর: কুড়িগ্রামের বুকজুড়ে এক নিরব সৌন্দর্যের নাম

টুপামারী পুকুর। ছবি সংগৃহীত

নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম:  উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গড়াই গ্রামে একদিকে সবুজ ফসলের মাঠ, অন্যদিকে একটি প্রশস্ত পুকুরের ধারে ছায়া ঘেরা পাড়। দূর থেকে তাকালেই চোখে পড়ে শান্ত জলের মুখে নরম বাতাসের ঢেউ। স্থানীয়দের মুখে মুখে যার নাম টুপামারী পুকুর।

সরকারি কাগজপত্রে এটি টুপামারী পুকুর নামে পরিচিত হলেও স্থানীয়রা বলেন জিয়া পুকুর। এর নামকরণের পেছনেও রয়েছে এক সময়ের মাটির ঘ্রাণমাখা গল্প। একসময় বর্ষার মৌসুমে এই এলাকায় প্রচুর কৈ মাছ পাওয়া যেত। গ্রামবাসীরা বলত কৈটোপা ধরতে যাই। সেখান থেকে আস্তে আস্তে জায়গাটির নাম হয় টুপামারী।

প্রথমে এটি ছিল একটি নিচু জলাভূমি। পরে সরকারি প্রকল্প এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় এটি পুকুরে রূপ নেয়। আয়তনে প্রায় পঁচিশ একর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুকুরের পাড়জুড়ে গড়ে উঠেছে বনজ ও ফলজ বৃক্ষ। নিরিবিলি পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা তাল ও কড়ই গাছ এই জলাশয়কে করে তুলেছে আরও মোহনীয়।

এক সময় এই পুকুর ছিল স্থানীয়দের মাছ ধরার ও গোসলের জায়গা। এখন এটি বিনোদনপ্রিয় মানুষের জন্য এক স্বস্তির ঠিকানা। পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা বা ছুটির দিনগুলোতে বহু মানুষ আসে এখানে। পিকনিক, নৌকাভ্রমণ, ছবি তোলা কিংবা স্রেফ প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো—সবকিছুর মিলনস্থল এখন টুপামারী পুকুর।

বর্ষায় কখনও কখনও পাড়ে দেখা যায় পদ্মফুল। পুকুরের নিঃশব্দ সৌন্দর্যে এই ফুল যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। আগ্রহী হয়ে উঠছে তরুণরা, আসছে আলোকচিত্রপ্রেমী ও ভ্লগাররাও।

পুকুরের জলের স্বচ্ছতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এখনও রক্ষা পেয়েছে কিছুটা স্থানীয় উদ্যোগ আর সতর্কতার কারণে। তবে নানা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এখানে নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা কিংবা শিশুদের জন্য বিনোদনের আয়োজন।

স্থানীয়দের দাবি, এই পুকুরকে ঘিরে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। যদি কাঙ্ক্ষিত উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে এটি কুড়িগ্রাম জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতে পারে।

টুপামারী পুকুর এখন আর শুধু এক জলাশয়ের নাম নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক সময়ের সাক্ষী, এক গ্রামের ইতিহাস, আর কুড়িগ্রামের নিঃশব্দ প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি।