আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানি ৮২-তে পৌঁছেছে। এই প্রাণঘাতী পরিস্থিতি দেশজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষত বন্যার পূর্বাভাস ও সরকারি প্রস্তুতির বিষয়ে। বন্যার তাণ্ডব যেমন জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন ব্যবস্থা। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও সম্পূর্ণভাবে নিরূপণ না হলেও তা ইতিমধ্যেই শত কোটি ডলার ছাড়িয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পানি, বিপর্যস্ত জনপদ
টেক্সাসের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে টানা ভারী বর্ষণের পর হঠাৎ করে উজান থেকে বিপুল পরিমাণ পানি নেমে আসে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নদ-নদীর পানি ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেক জায়গা নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, পানির উচ্চতা এত দ্রুত বেড়ে যায় যে অনেক মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি। অনেকে গৃহে আটকা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ কেউ আবার গাড়ি নিয়ে রাস্তায় থাকাকালে তলিয়ে গেছেন।

প্রাথমিক সংকেত থাকলেও পর্যাপ্ত সতর্কতা ছিল না
বিষয়টি আরও হতাশাজনক হয়ে দাঁড়ায় আবহাওয়া বিভাগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রতিক্রিয়ার ধীরগতির কারণে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও পরিবেশ বিশ্লেষকদের দাবি, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কিছু সতর্কতা থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রচার করা হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনও সময়মতো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়।
হিউস্টনের বাসিন্দা মার্থা লুইস বলেন, “আমরা জানতাম বৃষ্টি হবে, কিন্তু এত বড় দুর্যোগ হবে কেউ ভাবেনি। বন্যার খবর আমরা তখন পাই, যখন ঘরের নিচতলা পুরোপুরি ডুবে গেছে।”
আবহাওয়া দপ্তরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
এই বিপর্যয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ (NWS) ও ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির (FEMA) উপর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রযুক্তিতে অগ্রসর দেশে এমন দুর্যোগে এত প্রাণহানি হওয়ার কথা নয়। রাডার প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ ও এলার্ট সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও জনগণ কেন সময়মতো সতর্ক হয়নি, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. গ্যাব্রিয়েল টেইলর বলেন, “এটা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি ছিল নীতিগত ও প্রযুক্তিগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। সময়মতো সঠিক বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছালে প্রাণহানি অনেকটাই রোধ করা যেত।”
পরবর্তী পদক্ষেপ ও জরুরি অবস্থা
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (পুনর্নির্বাচিত) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং টেক্সাসে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড ও রেডক্রসসহ বিভিন্ন সংস্থা উদ্ধার ও ত্রাণকাজে নিযুক্ত রয়েছে। অঙ্গরাজ্য সরকার জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সহায়তায় পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
টেক্সাসের এই বন্যা স্মরণ করিয়ে দেয়, আধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, দ্রুত সতর্কবার্তা ও কার্যকর সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে দুর্যোগ পূর্বাভাস ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলোর নতুন করে মূল্যায়নের দাবি জোরালো হয়েছে।