হেলথ ডেস্ক: মানব চিকিৎসার ইতিহাসে প্রযুক্তির অবদান নতুন নয়। তবে রোবটিক সার্জারি সেই ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের গতিপথই বদলে দিয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রোগীর জীবন বাঁচাতে যেভাবে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে, রোবটিক সার্জারির ইতিহাস তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
সূচনা: ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রয়োগ
রোবটিক সার্জারির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। সে সময় ‘পুমা ৫৬০’ নামে একটি শিল্প রোবট ব্যবহার করে সফলভাবে একটি মস্তিষ্কের টিউমার অপসারণ করা হয়। এটি ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোবট ব্যবহারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
উন্নতির ধাপ: ‘দ্য ভিঞ্চি’ রোবট
২০০০ সালে এফডিএ অনুমোদন দেয় বহুল পরিচিত সার্জিকাল রোবট ‘দ্য ভিঞ্চি’-কে। এর আবির্ভাব রোবটিক সার্জারিকে জনপ্রিয় করে তোলে। ‘দ্য ভিঞ্চি’ সিস্টেমে সার্জনরা রোগীর শরীরের ভেতর সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে পারেন, যা প্রচলিত সার্জারির তুলনায় অনেক বেশি নিখুঁত ও ঝুঁকিমুক্ত।
বড় সাফল্য: ২০০১ সালের টেলিসার্জারি
২০০১ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। নিউইয়র্কে থাকা এক সার্জন ফ্রান্সে অবস্থান করা এক রোগীর পিত্তথলি অপসারণ করেন রোবট ব্যবহার করে। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম সফল আন্তর্জাতিক টেলিসার্জারি। সেই সময় উচ্চগতির স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবহার করে এ অপারেশন সম্ভব হয়েছিল।
আধুনিক যুগ: বিশ্বজুড়ে বিস্তার
এরপর রোবটিক সার্জারি দ্রুত বিকাশ লাভ করে। হৃদযন্ত্র, প্রোস্টেট, ক্যানসার টিউমার অপসারণ থেকে শুরু করে গাইনোকোলজি ও ইউরোলজির মতো জটিল শল্যচিকিৎসায় রোবট ব্যবহৃত হতে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর লাখ লাখ রোগীর রোবটিক সার্জারি হচ্ছে।
কেন রোবটিক সার্জারি জনপ্রিয় হলো?
- প্রচলিত সার্জারির তুলনায় কম রক্তপাত ও কম ব্যথা।
- দ্রুত সেরে ওঠার সুযোগ।
- সার্জনের জন্য সূক্ষ্মতা বজায় রাখার সুবিধা।
- রোগীর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, গত চার দশকে রোবটিক সার্জারি ধীরে ধীরে একটি বিলাসিতা থেকে বৈশ্বিক চিকিৎসার অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। আর সাম্প্রতিক ট্রান্সকন্টিনেন্টাল সার্জারির সাফল্য এ ধারাকে আরও বিস্তৃত করবে।