Home Second Lead বন্দরে ট্যারিফ বৃদ্ধি ‘মগের মুল্লুকের সিদ্ধান্ত’-শিল্পপতি আমিরুল

বন্দরে ট্যারিফ বৃদ্ধি ‘মগের মুল্লুকের সিদ্ধান্ত’-শিল্পপতি আমিরুল

আমরা বিদেশি অপারেটরের বিপক্ষে না, কিন্তু ট্যারিফ বাড়িয়ে ওদের সুবিধা করে দেয়া যাবে না

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ আমিরুল হক। তিনি বলেছেন, “এই দেশটা একসময় মগের মুল্লুক ছিল—মনে হচ্ছে এখন আবার সেই সময় ফিরে এসেছে। বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধি মগের মুল্লুকের মানুষের ওপর অন্যায়ের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত।”
মোহাম্মদ আমিরুল হক

শনিবার (১৮ অক্টোবর) নেভি কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজারস ফোরাম আয়োজিত সভায় প্রধান সমন্বয়কারীর বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আমিরুল হক বলেন, “একজন ট্রাক ড্রাইভার আগে ৫৬ টাকা দিতো, এখন দিতে হবে ২৩০ টাকা। এটা ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি। অথচ সংবাদে বলা হয়েছে মাত্র ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা কি বাটপারি, নাকি জোচ্চুরি?”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “গাড়ি যখন ব্রিজ দিয়ে যায়, টোল দেয় গাড়ির জন্য, ড্রাইভারের জন্য আলাদা টাকা দিতে হয় না। তাহলে বন্দরে গেইট পাসের নামে ড্রাইভারের কাছ থেকে টাকা নেওয়া কোন আইনে সম্ভব? সভ্য সমাজে এমন কিছু আছে?”

পুরনো দিনের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “একসময় গেইট পাস ছিল ৫০ পয়সা। সেই ৫০ পয়সা এখন ২৩০ টাকা হয়েছে। এটা কি ন্যায্য?”

শিল্পপতি আমিরুল হক আরও বলেন, “পোর্ট ট্যারিফ ছয়-সাত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখন আবার ‘স্টোর রেন্ট’ নামে নতুন একটা পেনাল্টি বসানো হয়েছে। আপনি যদি ইম্পোর্ট করেন, কিন্তু কাস্টমস অ্যাসেসমেন্ট করতে না পারে, তাহলে কেন ব্যবসায়ীদের ওপর পেনাল্টি চাপানো হবে? কাস্টমসের অভ্যন্তরীণ সমস্যার দায় ব্যবসায়ীরা নেবে কেন?”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় নেওয়া হয়েছে, যখন এফবিসিসিআই কিংবা চিটাগাং চেম্বার সক্রিয় নেই। তাই সুবিধামতো সময় বেছে নিয়েই এই অন্যায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমরা এটা হতে দেবো না—দেবো না, দেবো না।”

বিদেশি অপারেটরদের বিপক্ষে নয় জানিয়ে আমিরুল হক বলেন, হ্যাঁ, আমরা বিদেশি অপারেটরের বিপক্ষে না। যেকোনো বিদেশি অপারেটরকে দেন আপনি এক্সপার্টাইজ বাড়ানোর জন্য আমরা পক্ষে আছি। কিন্তু চট্টগ্রাম পোর্টের ট্যারিফ বাড়িয়ে বিদেশি অপারেটর,  হবে না। নাম্বার ওয়ান। আরেকটা ব্যাপার হলো কি, আপনি ট্যারিফ বাড়াবেন তাও রাজি আছি, সবার সাথে বসেন। কোন জায়গায় ট্যারিফ বাড়াতে হবে ঠিক করেন, স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলেন। আমাদের অনেকগুলি ট্যারিফ আছে যেখানে চেঞ্জ করা দরকার আছে। হ্যাঁ, যুগের পরিবর্তনে বাড়ান।

তিনি আরও বলেন, “যখন ডলারের দাম ছিল ৩০ টাকা, তখনকার ট্যারিফের সঙ্গে এখনকার ১২২ টাকার ডলার দরে তুলনা করা উচিত। যুগের পরিবর্তনে ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণ দরকার, কিন্তু সেটা যুক্তির ভিত্তিতে হতে হবে।”

শেষে তিনি প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, সেই মর্যাদার সঙ্গে আচরণ করুন। আমরা যারা ব্যবসায়ী, তারাও এই দেশের নাগরিক। আমাদের সঙ্গে শালীনভাবে আচরণ করুন। আগামী দিনে যদি কোনো কারণে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যায়, তার দায় আমাদের নয়—যারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাদেরই হবে।”

সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিরা আমিরুল হকের বক্তব্যে সংহতি প্রকাশ করেন এবং ট্যারিফ বৃদ্ধি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।