Home Third Lead মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে ট্রান্স নারী শিক্ষার্থী বহিষ্কারের নেপথ্যে

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে ট্রান্স নারী শিক্ষার্থী বহিষ্কারের নেপথ্যে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট:  বেসরকারি মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে সাহারা চৌধুরী নামে এক ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তিনি অনলাইনে কিছু মানুষকে হুমকি দিয়েছেন এবং ক্যাম্পাসে অস্ত্র বহন করে অন্য শিক্ষার্থীদের মনে ভয় সৃষ্টি করেছিলেন। ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাহারাকে গত ১৩ আগস্ট বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অন্যদিকে সাহারা বলছেন, তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনকে নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র শেয়ার করেছিলেন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর কিছু শিক্ষার্থী ও বাইরের গোষ্ঠী প্রশাসনের কাছে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। তার অভিযোগ, বহিষ্কারের চিঠিতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শেখ আশরাফুর রহমান বলেন, সাহারা অনলাইনে রাষ্ট্রের কিছু সম্মানীয় ব্যক্তিকে হুমকি দিয়েছেন এবং ক্যাম্পাসে ছুরি বহন করেছেন। এতে অন্য শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে তার সঙ্গে ক্লাস করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাহারাকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সিলেট জেলা সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ জানান, সাহারা শুরু থেকেই ট্রান্স নারী পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তির সময় উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়েছিল। তিনি বলেন, নিরাপত্তার কারণে ছুরি বহন করা হলেও সেটি প্রশাসনের জানা ছিল এবং এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারত, কিন্তু বহিষ্কার ছিল অযৌক্তিক পদক্ষেপ।

এই ঘটনার পর নাগরিক সমাজের ১৬২ জন ব্যক্তি এক বিবৃতি দিয়ে সাহারার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষাবিদ আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আজফার হোসেন, আইনজীবী মানজুর আল মতিন ও সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ। তারা বলেন, ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে সমাজকে বিভাজিত করার প্রবণতা দৃশ্যমান হচ্ছে এবং সাহারার বহিষ্কার এরই প্রতিফলন।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় উচ্ছৃঙ্খল জনতার চাপে নতি স্বীকার করেছে। এতে শুধু একজন শিক্ষার্থীর অধিকার হরণ হয়নি, বরং ট্রান্স পরিচয়ের মানুষদের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।