Home আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক জলপথে মার্কিন প্রভাব বিস্তারের নতুন কৌশল ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক জলপথে মার্কিন প্রভাব বিস্তারের নতুন কৌশল ট্রাম্পের

সংগৃহীত ছবি

বিজেনসটুডে২৪ ডেস্ক:

ওয়াশিংটন: পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক জলপথে আমেরিকার আধিপত্য নিশ্চিত করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। শনিবার তিনি পানামা ও সুয়েজ খাল দিয়ে মার্কিন সামরিক এবং বাণিজ্যিক জাহাজের বিনামূল্যে চলাচলের দাবি জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে এ বিষয়ে “তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ” গ্রহণের নির্দেশ দেন।

ট্রাম্পের এই দাবি নতুন কোনো বিষয় নয়। ১৯১৪ সালে উদ্বোধনের পর দীর্ঘদিন পানামা খাল ছিল মার্কিন নিয়ন্ত্রণে, যদিও ১৯৯৯ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পানামার হাতে হস্তান্তর করা হয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আমেরিকার সেই পুরনো কৌশলগত আধিপত্য ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

একইসঙ্গে সুয়েজ খাল, যা ইউরোপ ও এশিয়ার বাণিজ্যের মূল সেতুবন্ধন হিসেবে পরিচিত, বর্তমান সময়ে হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমণের কারণে সংকটের মুখে। গাজা যুদ্ধের জেরে লোহিত সাগরে হামলা বাড়ায় এই খালপথের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। মিশর গত বছর জানিয়েছিল, সুয়েজ খাল থেকে তাদের আয় ৬০ শতাংশ কমে গেছে, যা অর্থনীতির উপর মারাত্মক চাপ তৈরি করেছে।

ট্রাম্পের অবস্থান: শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামরিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ

ট্রাম্পের মতে, আমেরিকার বিনিয়োগ ও ভূরাজনৈতিক শক্তির ফলেই পানামা ও সুয়েজ খাল বিদ্যমান। ফলে তিনি যুক্তি দিচ্ছেন, মার্কিন জাহাজের জন্য এই দুটি খাল ‘মুক্ত’ হওয়া উচিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই দাবির মূল লক্ষ্য শুধু খরচ কমানো নয়; বরং আন্তর্জাতিক জলপথে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আরও সহজ করা। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর, লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের বর্ধিত প্রভাবের প্রেক্ষিতে এটি একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য জটিলতা

এখনো মিশর বা পানামার পক্ষ থেকে ট্রাম্পের দাবির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালগুলোর পরিচালনা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে কোনো দেশের একক দাবি আন্তর্জাতিক চুক্তি ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী হতে পারে। বিশেষ করে ১৯৭7 সালের পানামা চুক্তি অনুযায়ী, পানামা খাল একটি নিরপেক্ষ জলপথ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, মিশরের জন্য সুয়েজ খাল কেবল বাণিজ্য নয়, জাতীয় আয়ের একটি অন্যতম প্রধান উৎস। ফলে বিনামূল্যে মার্কিন চলাচল অনুমোদন করলে মিশর নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, যদি এই দাবি জোরপূর্বক বাস্তবায়নের চেষ্টা হয়, তবে তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে, যেখানে চীন, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো একজোট হতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির ইঙ্গিত

ট্রাম্প ইতিমধ্যে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছেন। যদি এই হামলা অব্যাহত থাকে এবং খালগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের মতো উদ্যোগ দেখা যেতে পারে, যেখানে আমেরিকা নেতৃত্বের চেষ্টা করবে।

বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের এই নতুন চাল আন্তর্জাতিক জলপথকে কেন্দ্র করে নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করছে — যার প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক বাণিজ্য, তেল সরবরাহ ও সামরিক ভারসাম্যের উপর।