আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার সৌদি আরবে পৌঁছেছেন তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সফরে। সফরটির লক্ষ্য একদিকে গাজা যুদ্ধ নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, অন্যদিকে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়িক চুক্তি। সফরসূচিতে সৌদি আরবের পর কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম থাকলেও, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অগ্রগতি হলে তুরস্ক সফরের কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন থেকে রওনা হওয়ার ঠিক আগে গাজার হামাসের হাতে আটক মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিক এডান আলেকজান্ডার মুক্ত হয়ে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তরের খবর জানান প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসে তিনি বলেন, “তিনি এখন তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরবেন, যারা তাকে মৃত ভেবেছিলেন। এটি সত্যিই ভালো খবর।”
গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান কিছুটা নরম হলেও, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার মতবিরোধ বেড়েছে বিশেষ করে গাজায় হামলার কৌশল, ইয়েমেনের হুথিদের ওপর আঘাত, ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে। প্রেসিডেন্ট বলেন, “ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না,” তবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের কিছু “ভালো অগ্রগতি” হয়েছে বলেও জানান।
এই সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প একদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি গাজা থেকে আরও কয়েকজন জিম্মি মুক্ত হবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে এগোনো সম্ভব হবে।”
এদিকে, কাতার ইতিমধ্যে গাজা যুদ্ধ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। হামাস ট্রাম্পকে “যুদ্ধ থামাতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার” আহ্বান জানিয়েছে। অপরদিকে, ইসরায়েল কাতারে আলোচনায় নতুন প্রতিনিধি পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
ট্রাম্পের সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ইউক্রেন সংকট। তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার যদি তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়, তাহলে তিনি ইস্তাম্বুল সফরে যেতে পারেন। এমনকি সম্ভাব্য বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কির উপস্থিতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। যদি এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে এটি হতে পারে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দুই নেতার প্রথম সরাসরি মুখোমুখি হওয়া।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সফর তাকে একদিকে আবারো বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় কূটনৈতিক চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, অন্যদিকে উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককেও সামনে নিয়ে আসে। ২০১৭ সালের প্রথম মেয়াদেও তার প্রথম বিদেশ সফর শুরু হয়েছিল সৌদি আরব থেকেই।
তবে এবারের সফরে ইসরায়েল অন্তর্ভুক্ত না হওয়াটিকে অনেকেই কৌশলগত বার্তা হিসেবে দেখছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমা মিত্রদের বাদ দিয়ে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে ট্রাম্প একদিকে নিজের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে আরও স্পষ্ট করছেন, অন্যদিকে আঞ্চলিক চুক্তিগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব বৃদ্ধিরও চেষ্টা করছেন।