মন্তব্য প্রতিবেদন
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় আন্তর্জাতিক সফরে মধ্যপ্রাচ্যকে বেছে নিয়ে কূটনৈতিক অগ্রাধিকার যেন স্পষ্ট করে দিলেন। সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের মধ্য দিয়ে এই সফর যতটা তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিকভাবে, ততটাই প্রতীকী ও অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন। গাজা যুদ্ধ, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ এই তিনটি ভূরাজনৈতিক ইস্যুকে ঘিরেই ট্রাম্পের এই সফরের মূল লক্ষ্য গড়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছেন, তিনি গাজা যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে পারবেন। বাস্তবে অবশ্য হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর তাকে দেখা গেছে কিছুটা ধীরগতির কূটনীতিতে। কিন্তু এবার সফরের ঠিক পূর্বমুহূর্তে মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মি এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি একধরনের কৌশলগত সফলতা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। এটিকে ‘বড় খবর’ বলে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বুঝিয়ে দিলেন মানবিক ইস্যু তার আলোচনায় আছে এবং এটি কূটনীতির দরজা খুলতে পারে।
গাজা ইস্যুতে তাঁর অবস্থান এখন স্পষ্টতই নেতানিয়াহুর সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরির ইঙ্গিত দেয়। শুধু গাজা নয়, ইরান ও ইয়েমেন ইস্যুতেও ওয়াশিংটন ও তেলআবিবের মধ্যে মতপার্থক্য দৃশ্যমান। এই সফরে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় “ভালো কিছু ঘটছে”। অর্থাৎ কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা রয়েছে, যদিও ট্রাম্প বলেছেন, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না।”
একইসঙ্গে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধেও একটি কৌশলগত মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাইছেন। তিনি জানালেন, তুরস্কে যদি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মুখোমুখি আলোচনা হয়, তাহলে তিনি সেখানে যোগ দিতে পারেন। এমন সম্ভাবনা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা হবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের একটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক মাইলফলক।
তবে বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন এই সফর কি সত্যিকারের শান্তির বার্তা বহন করছে, না কি এটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তারের অংশ? মনে রাখা দরকার, ট্রাম্পের আগের মেয়াদে তার প্রথম বিদেশ সফরও ছিল সৌদি আরব, যেখানে আলোচিত “অরব গ্লো” মুহূর্তের জন্ম হয়েছিল। সেই স্মৃতি মাথায় রেখেই বলা যায়, ট্রাম্প শুধু রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব নয়, প্রতীকী নাটকও চমৎকার বোঝেন।
বর্তমান বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্য নতুন করে বৈশ্বিক কূটনীতির কেন্দ্রে উঠে এসেছে গাজা যুদ্ধ, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং জ্বালানি নিরাপত্তা সবকিছু একত্রে এই অঞ্চলকে আবারো ভূরাজনৈতিক উত্তপ্ত কেন্দ্রে পরিণত করেছে। ফলে ট্রাম্পের এই সফর শুধু মার্কিন রাজনীতির জন্য নয়, বৈশ্বিক কৌশলগত হিসাবের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও সফরের শেষ ফলাফল এখনো অনিশ্চিত, তবে এতটুকু বলা যায় ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে কূটনীতিতে ফের সক্রিয় হয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, তিনি একজন শান্তির মধ্যস্থতাকারী হয়ে উঠতে পারেন কি না, নাকি শুধু ব্যবসা ও স্বার্থকেন্দ্রিক কৌশলে মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেন।