আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ এক ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা ৬টার কিছু পর এই দুর্ঘটনা ঘটে রিডলিঙ্গেন শহরের কাছে, যেখানে প্রায় ১০০ জন যাত্রী নিয়ে একটি আঞ্চলিক যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে বাডেন-ভুরটেমবার্গ রাজ্যের রিডলিঙ্গেন শহরের পাশে দুর্ঘটনাটি ঘটে। রেউটলিঙ্গেন কন্ট্রোল সেন্টার ঘটনাটিকে “গণ হতাহতের ঘটনা” হিসেবে উল্লেখ করেছে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটি সিগমারিঙ্গেন শহর থেকে উলম শহরের দিকে যাচ্ছিল। রেললাইন থেকে অন্তত দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের জঙ্গলে পড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ফুটেজে দেখা যায়, হলুদ-ধূসর রঙের বগিগুলো উল্টে পড়ে আছে, আর ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকর্মীরা যাত্রীদের উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
দুর্ঘটনার পরপরই বিকল্প রেলসেবা চালু করা হয়েছে এবং অন্তত চারটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী রাজ্য বাভারিয়া থেকেও জরুরি সহায়তা পাঠানো হয়েছে।
বাডেন-ভুরটেমবার্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টমাস স্ট্রোবেল দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ড-কে বলেন, “আমাদের এখন তিনটি মৃত্যুর জন্য শোক জানাতে হচ্ছে। আহত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ, যাদের অনেকেই গুরুতর। সব যাত্রীকে বগি থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে, কিন্তু এখন বগিগুলো সরিয়ে নিশ্চিত করতে হবে কেউ নিচে চাপা পড়ে আছে কিনা।”
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ জানান, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বিবারাখ জেলায় ট্রেন দুর্ঘটনার খবর আমাকে ব্যথিত করেছে। আমরা নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাই।”
ফেডারেল পরিবহনমন্ত্রী প্যাট্রিক শ্নাইডার ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, “ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। আমরা রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি এবং সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছি।”
জার্মানিতে এমন ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা বিরল হলেও সম্প্রতি দেশটির রেল ব্যবস্থায় সময়মতো সেবা না পাওয়া ও নানা সমস্যার অভিযোগ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি ডয়চে বান-এর প্রায় ৩৫ শতাংশ ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে পৌঁছেছে। এমনকি সুইজারল্যান্ড তাদের সীমান্ত শহর বাসেলের দিকে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে সময়সূচির বিশৃঙ্খলার কারণে।
ডয়চে বান-এর প্রধান নির্বাহী রিশার্ড লুটজ জানিয়েছেন, “দ্বিতীয় প্রান্তিকে সময়ানুবর্তিতায় ভাটা এসেছে যন্ত্রপাতির ত্রুটি ও অনাকাঙ্ক্ষিত নির্মাণ কাজের কারণে।”