হেলথ ডেস্ক: আজ ১৪ই নভেম্বর, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি পালিত হচ্ছে “Access to Diabetes Care” বা ‘ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সহজপ্রাপ্যতা’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে। জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবসটি সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করা এবং রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৫৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যার সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ কোটিরও বেশি হতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেকই জানেন না যে তারা এই রোগে ভুগছেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর নাগরিক, যেখানে চিকিৎসা, পরীক্ষা এবং ওষুধের সহজলভ্যতা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতিও আশঙ্কাজনক। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (IDF) তথ্যমতে, দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এবং এ সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নগরায়ণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও অতিরিক্ত মানসিক চাপকে বিশেষজ্ঞরা এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন শতাধিক নতুন রোগী ডায়াবেটিস শনাক্ত হন। যদিও শহরাঞ্চলে ডায়াবেটিস শনাক্ত ও চিকিৎসার সুযোগ তুলনামূলক বেশি, কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় এখনও সচেতনতার অভাব প্রকট। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে জীবনকে স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।
এ উপলক্ষে আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্ণাঢ্য র্যালি, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষাসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন হাসপাতাল ও বেসরকারি সংস্থা বিনামূল্যে পরামর্শ ও স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস কেবল একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, বরং এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বোঝাও। তাই সময় এসেছে ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যনীতি ও চিকিৎসা-সুবিধাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার।
বিশেষজ্ঞদের বার্তা স্পষ্ট—রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করুন, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন, এবং আজ থেকেই নিজের যত্ন নেওয়া শুরু করুন।










