Home স্বাস্থ্য মেটফর্মিন ও ইনসুলিন ব্যবহারে ‘হু’-এর নতুন গাইডলাইন

মেটফর্মিন ও ইনসুলিন ব্যবহারে ‘হু’-এর নতুন গাইডলাইন

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস: প্রতি ৬ জনে ১ জন আক্রান্ত, 

 হেলথ ডেস্ক: বয়স, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিশ্বজুড়ে নারীদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ছয়জন অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসার নতুন ও বিস্তারিত নির্দেশিকা বা ‘ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন’ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

নতুন এই নির্দেশিকায় টাইপ–২ ডায়াবেটিস এবং গর্ভকালীন (জেস্টেশনাল) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার ওষুধ ‘মেটফর্মিন’ (Metformin) ব্যবহারের স্পষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। প্রয়োজনে ইনসুলিনের সঙ্গে কম্বিনেশন থেরাপি ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে।

উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান ও ঝুঁকি
হু-এর তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে বছরে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ নারী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে একটি বড় অংশ যথাযথ চিকিৎসার বাইরে থেকে যান। গর্ভাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত সুগারের ফলে মা ও শিশুর মারাত্মক ঝুঁকির কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে:

মায়ের প্রি–এক্ল্যামশিয়া (উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি)।

গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি।

নবজাতকের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি (৪ কেজির বেশি) হওয়া।

জন্মের পর শিশুর রক্তে শর্করা কমে যাওয়া।

ভবিষ্যতে মা ও শিশু উভয়েরই টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি।

নতুন গাইডলাইনে চিকিৎসার রোডম্যাপ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুই ধরনের পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়েছে—যাঁরা আগে থেকেই ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং যাঁরা গর্ভধারণের পর ডায়াবেটিসে (জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস) আক্রান্ত হয়েছেন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে:
১. লাইফস্টাইল পরিবর্তন: চিকিৎসার শুরুতে ব্যক্তিনির্ভর খাদ্যাভ্যাস (Food Plan) এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ওপর জোর দিতে হবে।
২. ওষুধ প্রয়োগ: যদি ডায়েট ও শরীরচর্চায় সুগার নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে অ্যান্টি–ডায়াবেটিক ওষুধ হিসেবে চিকিৎসকরা ‘মেটফর্মিন’ প্রেসক্রাইব করবেন।
৩. কম্বিনেশন থেরাপি: মেটফর্মিনে কাজ না হলে কালক্ষেপণ না করে ইনসুলিন যোগ করে কম্বিনেশন থেরাপি শুরু করতে হবে।
৪. মনিটরিং: পুরো গর্ভকালজুড়ে ব্লাডসুগারের কঠোর মনিটরিং এবং স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ও পুষ্টিবিদের সমন্বয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রেক্ষাপট: ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া
বিভিন্ন দেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এখন ‘নীরব মহামারী’।  চিকিৎসকদের মতে, ত্রুটিপূর্ণ জীবনশৈলীর কারণে এখন কম বয়সেই নারীরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিসংখ্যান বলছে, অন্তঃসত্ত্বাদের অন্তত ১৩ শতাংশ জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসে ভুগছেন। আশঙ্কার বিষয় হলো, এদের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশের ডায়াবেটিস প্রসবের পরেও থেকে যাচ্ছে, যা পরে স্থায়ী টাইপ-২ ডায়াবেটিসে রূপ নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নতুন নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বেঙ্গল অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নেকোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি বাসব মুখোপাধ্যায় বলেন, “গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দ্রুত বাড়ছে। হু–এর এই গাইডলাইন ফ্রন্টলাইন ডাক্তারদের খুব সাহায্য করবে এবং চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ মানুষ—সবার সচেতনতা বাড়াবে।”

এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কম বয়সে ডায়াবেটিসের যে ঢেউ দেখা যাচ্ছে, তাতে গর্ভাবস্থায় সুগার ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। হু-এর এই গাইডলাইন চিকিৎসার ক্ষেত্রে শূন্যস্থান পূরণ করবে এবং মা ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।