Home First Lead দীর্ঘদিন পর শেয়ারবাজারে বড় গতি, আশা ও সতর্কতার মিশ্র বার্তা

দীর্ঘদিন পর শেয়ারবাজারে বড় গতি, আশা ও সতর্কতার মিশ্র বার্তা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে বুধবার ছিল এক ব্যতিক্রমী দিন। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর আজ সূচক ও লেনদেনের দিক দিয়ে দেখা গেছে রেকর্ড স্পর্শের সাফল্য। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজকের লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৯৮৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, যা গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। একইসঙ্গে সূচক বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৩৬৩.৯৪ পয়েন্ট, যা গত ৯ মাসের সর্বোচ্চ অবস্থান।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক এই গতি নতুন করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, সদ্যঘোষিত মুদ্রানীতির ইতিবাচক প্রভাব এবং বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপগুলো বাজারে এই গতিশীলতা আনতে সহায়ক হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি খাতে উন্নত আয়প্রকাশও বাজারে আস্থার পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছে।

তবে এই চাঙ্গাভাবের মধ্যে কিছু সতর্কতার বার্তাও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, বাজারে হঠাৎ করে অতিরিক্ত বিনিয়োগের প্রবণতা তৈরি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা এবং মৌলভিত্তি বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

আজকের ডিএসইতে অংশ নিয়েছে ৩৯৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২১৮টির, কমেছে ১০২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৯টি। সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি এই সংখ্যানুপাতও একটি ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে।

ডিএসইর অন্যান্য সূচকের মধ্যেও দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য গতি। ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ১৬.৮০ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৫৬.৩১ পয়েন্ট। এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ছিল লেনদেনের উর্ধ্বগতি। সেখানে লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার, এবং সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮৮৯.৫৮ পয়েন্টে।

এ অবস্থায় বাজারে নতুন করে যে গতি ফিরে এসেছে, সেটি স্থায়ী হবে কিনা তা নির্ভর করছে অর্থনীতির সামগ্রিক গতি, নীতিনির্ধারণী ধারাবাহিকতা এবং বিনিয়োগকারীদের আচরণের উপর। বাজারে প্রবেশের আগে যথাযথ বিশ্লেষণ ও সচেতনতার গুরুত্ব তাই অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া:

ঢাকার মতিঝিলের এক পুরোনো বিনিয়োগকারী মো. আব্দুর রশিদ বলেন, “অনেক দিন পর মনে হচ্ছে বাজারে সত্যিই প্রাণ ফিরেছে। এতদিন শুধু লোকসান গুনেছি, আজ কিছুটা হলেও আশা জেগেছে। তবে এখনই বড় বিনিয়োগে যাচ্ছি না, দেখি এই গতি স্থায়ী হয় কিনা।”

নতুন প্রজন্মের বিনিয়োগকারী ফারিয়া হোসেন, যিনি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করেন, জানান, “আমি মূলত ছোট পরিসরে লেনদেন করি। আজ লেনদেনের পরিমাণ দেখে মনে হলো, হয়তো এবার দীর্ঘমেয়াদে ভালো কিছু হতে পারে। কয়েকটা কোম্পানির শেয়ার নিয়েছি, তবে সাবধানে এগোচ্ছি।”

এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাও বলেন, “পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও আজ কয়েকবার ট্রেডিং অ্যাপ খুলে দেখেছি। বাজারে একটা উৎসবমুখর ভাব ছিল। অনেকে আবার ফিরছেন, এটা ভালো দিক। তবে আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাদের জন্য স্থিতিশীলতা দরকার।”

একজন প্রবীণ বিনিয়োগকারী, মো. মতিউর রহমান, যিনি প্রায় ২০ বছর ধরে বাজারে যুক্ত, বলেন,
“আজকের মতো এমন লেনদেন বহুদিন পর দেখলাম। কিন্তু বাজারে অতীতের মতো বারবার ধাক্কা এসেছে, তাই আমি খুব সাবধানে চলি। যাঁরা এখন হুজুগে বিনিয়োগ করছেন, তাঁদের সতর্ক থাকা উচিত।”