Home Second Lead ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন কমাতে প্রস্তুত বাংলাদেশের পোশাক খাত

২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন কমাতে প্রস্তুত বাংলাদেশের পোশাক খাত

আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্যাসকেল প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পের টেকসই অগ্রগতির চিত্র। ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট: ম্যাক্রোইকনমিক অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি অ্যানালাইসিস’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্প কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানোর যে ‘ইন্ডাস্ট্রি ডিজকার্বনাইজেশন রোডম্যাপ (IDR)’ আছে, তাতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রাখে।

এর আগে ক্যাসকেল ভিয়েতনামের ওপর একই ধরনের একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যা তৈরি হয়েছিল অ্যাপারেল ইমপ্যাক্ট ইনস্টিটিউট (Aii)-এর সহায়তায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাঁদের বড় অংশ নারী। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দাঁড়ায় ৪৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৮ শতাংশ।

টেকসই উদ্যোগের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ‘সাসটেইনেবিলিটি ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছে, যার আওতায় রয়েছে গ্যাস-নির্গমন ৩০ শতাংশ হ্রাস, পরিবেশবান্ধব কাঁচামালের ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়ানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর ২০ শতাংশ নির্ভরতা এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক নিষ্কাশন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি।

২০২৩ সালে প্রায় ১,৩০০ কারখানা ক্যাসকেলের পরিবেশগত মূল্যায়ন পদ্ধতি ‘হিগ ফ্যাসিলিটি এনভায়রনমেন্টাল মডিউল’ (FEM) ব্যবহার করেছে, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। বর্তমানে দেশে ২৪০টির বেশি এলইইডি-প্রত্যয়নপ্রাপ্ত সবুজ কারখানা রয়েছে এবং আরও ৫০০ কারখানা প্রত্যয়নপ্রক্রিয়ায় আছে।

তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এখনো সীমিত। মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাত্র ২ শতাংশ আসে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে, আর গ্যাসের ওপর নির্ভরতা ৫৭ শতাংশ। এর মাঝেও অনেক পোশাক কারখানা সৌর বিদ্যুৎ, বায়োজ্বালানি এবং শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।

২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা গ্রহণ করেছে, যাতে কর ছাড় ও জ্বালানি আমদানি নিরুৎসাহিত করার কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই নীতির লক্ষ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশবান্ধব শক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া। আগামী সাধারণ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বিজিএমইএ-এর সদ্য নির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, যা তৈরি পোশাক খাতে প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্যাসকেলের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট পরিচালক ক্যারোলিনা ফন লোনেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশের শ্রমশক্তি এ শিল্পের মূল চালিকাশক্তি। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, যাতে এই শিল্প টেকসই ও মানবিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে।’