পঞ্চগড়: জনবান্ধব প্রশাসনে নতুন উদাহরণ জেলা প্রশাসক সাবেত আলী
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
পঞ্চগড়:
নাগরিক সেবায় এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের গণশুনানি কার্যক্রম। প্রতি বুধবার সকাল থেকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কারও হাতে জমিজমার কাগজ, কারও চোখে কন্যার বিয়ের টেনশন, কেউ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিন্তায় এলেন সহায়তা পেতে। আর সকলের সামনেই আন্তরিকভাবে শুনছেন জেলা প্রশাসক মোঃ সাবেত আলী।

জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে তিনি শুধু অফিস কক্ষে বসে আদেশ দিচ্ছেন না—তিনি নাগরিকদের পাশে বসে তাদের কথা শুনছেন। একটি একটি করে সমস্যার সমাধান করছেন। জেলা প্রশাসকের এই জনমুখী ভূমিকা ইতোমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্বস্তরে।
সমস্যা, সমাধান ও সম্ভাবনার প্ল্যাটফর্ম
গণশুনানির মধ্য দিয়ে অসংখ্য মানুষের জীবন বদলে যাচ্ছে। কেউ পেয়েছেন চিকিৎসা সহায়তা, কেউ পেয়েছেন সেলাই মেশিন, কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছেন প্রশাসনের সহায়তায়। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ৬০০ জনকে আর্থিক সহায়তা, ৯২টি জমি সমস্যা, ২৫ শিক্ষার্থীকে বই, ২৬ জনকে ভর্তি সহায়তা, এবং আরও অনেকে পেয়েছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও কর্মসংস্থানের উপকরণ।
বোদার আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “একটি রাস্তার বিষয়ে অনেকদিন ধরে ঘুরেছি, কিন্তু সমাধান পাইনি। গণশুনানিতে বলতেই কাজ শুরু হয়ে গেছে।”
আটোয়ারীর সমির উদ্দিন বলেন, “আমি কিডনির রোগী। স্যারের সহায়তায় চিকিৎসার কিছু টাকা পেয়েছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় সহায়তা।”

চা শিল্পে নতুন দিগন্ত
পঞ্চগড়ের অন্যতম বড় সমস্যা কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। চা শিল্প সিন্ডিকেটমুক্ত করতে এবং চায়ের গুণগত মান উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিনি চা চাষিদের কথা শুনছেন, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজছেন।
একজন জেলা প্রশাসক যাঁর পাশে জনগণ
শুধু সমস্যা শোনা নয়, জনাব সাবেত আলী কাজ করছেন দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত পঞ্চগড় গড়তে। জনসচেতনতা বাড়াতে তিনি সবার দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনতে নিয়মিত তদারকি করছেন।
পঞ্চগড়ের শিংরোড এলাকার বাসিন্দা তমিজ উদ্দিন বলেন, “অনেক কর্মকর্তা গরিব মানুষকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু ডিসি স্যার আমাদের পাশে বসিয়ে কথা শুনেছেন। আমি কন্যার বিয়ের জন্য আবেদন করেছিলাম, সাথে সাথেই সহায়তা পেয়েছি।”
আশা, আস্থার নতুন ঠিকানা
গণশুনানি কার্যক্রমে শুরুতে হয়তো ১০–২০ জন আসতেন। এখন একেকদিন ১০০–১৫০ জন পর্যন্ত আবেদনকারী আসছেন। গণশুনানি হয়ে উঠেছে মানুষের আশার জায়গা। প্রতিটি সমস্যার পেছনে থাকছে একজন মানুষ, আর সেই মানুষটির পাশে দাঁড়াচ্ছেন জেলা প্রশাসক নিজে।
এভাবেই নাগরিক সেবার নতুন আদর্শ গড়ে তুলছেন মোঃ সাবেত আলী। পঞ্চগড়ের মানুষ আজ একবাক্যে বলছেন—এমন একজন জেলা প্রশাসকেরই প্রয়োজন ছিল, যিনি আমাদের পাশে থাকবেন, কথা শুনবেন, আর সমাধান দেবেন।