বিশেষ প্রতিবেদন
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে জাপানে সফররত। তাঁর এই সফর ঘিরে জাপানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম যেমন এনএইচকে, মেইনিচি শিমবুন, আসাহি শিমবুন, ও নিক্কেই এশিয়া একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জাপানের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে নিউজের ‘ওহায়ো নিপ্পন’ অনুষ্ঠানে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ড. ইউনূস বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করছি, ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং একটি শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে রূপান্তরের জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করতে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আশা করি, আন্তর্জাতিক সমর্থনে বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অগ্রসর হবে।”

আসাহি শিমবুন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনূস বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, “দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, “গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষা করতে হলে সকল দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য।” অ্যাসাহি শিমবুন-এর ২৯ মে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকটের মধ্যে রয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারছে না, নির্বাচন হয় প্রহসনের মতো। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হতে পারে।”
জাপানের দৃষ্টিভঙ্গি
জাপান বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামো, প্রযুক্তি এবং মানব উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে। নিক্কেই এশিয়া-র রাজনৈতিক বিশ্লেষক লিখেছেন, “বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা জাপানের দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
জাপান সরকার সরাসরি কোনো রাজনৈতিক মন্তব্য না করলেও, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা ‘জনগণের ইচ্ছা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার’ পক্ষে কথা বলেছে। ড. ইউনূসের সফরের সময় জাপানের অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকও এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।