বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: গ্রীষ্মের মধুর এই মওসুমে চট্টগ্রাম শহরের স্টেশন রোড এক অন্যরকম চিত্র বুকে ধারণ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তাজা ফলের পাহাড় যেন প্রাণ সঞ্চার করে এই এলাকায়। তাল, কাঁঠাল, আনারসসহ নানা রকম ফলের বিশাল ভাণ্ডার জমেছে এখানে। রাতের গভীরতায় শুরু হয় এই ফলবাহী চিরাচরিত ব্যবসা, যা দিনের আলো ফোটার আগেই চট্টগ্রামের খুচরা বাজারগুলো পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
স্টেশন রোডের বিভিন্ন মোড়ে চোখে পড়ে ট্রাকের সারি, যেগুলো থেকে নামানো হচ্ছে ফলের পট্টি। মালামাল নামানো থেকে শুরু করে সঠিকভাবে মজুত করার কাজ চলে নিরবচ্ছিন্ন। একেকটি ট্রাক থেকে নেমে আসে কাঁঠালের মোটা গাছের ডাল, তালের বড় বড় জোড়া, আনারসের ঘন দোলায় ভরা বাক্স। হিমঘরে সংরক্ষণ না থাকায় দ্রুত এই ফলগুলোকে খুচরা বাজারে পৌঁছে দিতে ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত।
ফল সরবরাহকারী কাদের মিয়া বলেন, “আমরা দেশের বিভিন্ন জেলা যেমন বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খুলনা থেকে রাতের অন্ধকারে ফল নিয়ে আসি। তাজা ফল বাজারে সময়মতো না পৌঁছালে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই গভীর রাতে আনা হয়। এরপর এখান থেকে খুচরা বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলে।”
স্টেশন রোডের পাশে রয়েছে বেশ কিছু ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি, যেগুলো ফল নিয়ে যায় শহরের নানান খুচরা বাজারে। এখান থেকে ফল কিনে যারা বিক্রেতা, তারা আবার তাদের গ্রাহকদের কাছে বিক্রির জন্য বিভিন্ন মোড়ে নিয়ে যান। কাঁঠালের মিষ্টতা আর তালের সজীবতা বাজারের ক্রেতাদের মুখে হাসি ফোটায়। আনারসের তীব্র গন্ধ পুরো বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, যা পরিমাণমতো না পেলে কষ্ট হয়।
খুচরা বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রতিদিন সকালে স্টেশন রোড থেকে ফল নিয়ে খুদে দোকানে বিক্রি করি। এখানে দাম তুলনামূলক সস্তা হয় এবং ফলের গুণগত মান ভালো। তাই ক্রেতাও বেশ আসে।”
এই মৌসুমে ফলের চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ ব্যবস্থা মোটামুটি সুষ্ঠু রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে যানজট ও অপ্রতুল স্থানজনিত কারণে ব্যবসায়ীরা কিছুটা অসুবিধায় পড়েন। তবে ফলের বাজার এখন চট্টগ্রামের এই পথকে জীবন্ত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সক্রিয় রেখেছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই ফলের পাহাড় ও ব্যবসার চিত্র যেন এক ধরনের উৎসবের আভাস বহন করে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে ফল কিনে নেয়, যা শহরের আর্থ-সামাজিক চিত্রকেও প্রভাবিত করে।
চট্টগ্রাম স্টেশন রোডের এই ফলের মৌসুম শুধু ব্যবসার ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সুস্বাদু ফলের সরবরাহ নিশ্চিত করে স্বস্তি নিয়ে আসে। তাই এই অঞ্চলটি প্রতিদিন একটি প্রাণবন্ত বাজার হিসেবে পরিণত হয়।
