বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: কাগজে-কলমে দেশ ২০৪১ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বাস্তবে চিত্রটা উল্টো। তামাক কোম্পানিগুলোর সূক্ষ্ম ও শক্তিশালী হস্তক্ষেপের কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
আজ সোমবার প্রজ্ঞা ও আত্মার যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক ২০২৫’-এর বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এই ভীতি জাগানিয়া তথ্য উঠে এসেছে।
১০০টি দেশের ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের স্কোর ৬৯। তামাকের আন্তর্জাতিক গাইডলাইন (আর্টিক্যাল ৫.৩) অনুযায়ী, স্কোর যত বাড়ে, জনস্বার্থ তত বেশি হুমকির মুখে পড়ে।
| দেশের নাম | বৈশ্বিক অবস্থান | স্কোর (যত কম, তত ভালো) |
| ব্রুনাই | ১ম | ১৪ |
| ভারত | ৫৯তম | – |
| বাংলাদেশ | ৬৬তম | ৬৯ |
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ নেপাল (৪৩তম) বা শ্রীলঙ্কাও (৪৫তম) বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের এই পিছিয়ে পড়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—নীতিমালা প্রণয়নে তামাক কোম্পানিগুলোর সরাসরি খবরদারি।
হস্তক্ষেপের ‘কূটকৌশল’ যখন নিয়ম: গবেষণা বলছে, এপ্রিল ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে তামাক কোম্পানিগুলো এক মুহূর্তের জন্যও বসে থাকেনি। তাদের হস্তক্ষেপের ধরণগুলো ছিল বৈচিত্র্যময়:
আইন সংশোধনে বাধা: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী ঠেকাতে তথাকথিত গবেষণা, গোলটেবিল বৈঠক এবং গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালানো হয়েছে।
স্বার্থের সংঘাত: সরকারি কর্মকর্তাদের বড় একটা অংশ তামাক কোম্পানির বোর্ডে থাকছেন অথবা তাদের সাথে লবিংয়ে লিপ্ত হচ্ছেন, যা সরাসরি জনস্বার্থের পরিপন্থী।
সিএসআর-এর আড়ালে বিপণন: কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির দোহাই দিয়ে নীতিনির্ধারকদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।
বিশেষজ্ঞের হুঁশিয়ারি: অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান একটি কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন,”তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী অধ্যাদেশ অনুমোদন হওয়া খুশির খবর, কিন্তু আসল লড়াইটা এখন গেজেট প্রকাশ নিয়ে। আমরা আর কোনো পর্দার আড়ালের হস্তক্ষেপ দেখতে চাই না।”
মুক্তির পথ: প্রজ্ঞার ৫ দফা সুপারিশ: শুধু সমালোচনা নয়, সংকট উত্তরণে প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কিছু সমাধানও দেয়া হয়েছে। :
আচরণবিধি প্রণয়ন: সকল সরকারি দপ্তরে তামাক কোম্পানির সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কঠোর আচরণবিধি তৈরি।
বিনিয়োগ প্রত্যাহার: তামাক কোম্পানিতে সরকারের যে শেয়ার বা বিনিয়োগ আছে, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা।
নিত্যপণ্যের তালিকা থেকে বাদ: সিগারেটকে কোনোভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রাখা যাবে না।
নতুন কারখানা নিষিদ্ধ: অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে নতুন কোনো তামাক কারখানার অনুমোদন না দেয়া।
দ্রুত গেজেট: ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ২০২৫’ দ্রুত চূড়ান্ত ও কার্যকর করা।
সূচকের এই ফলাফল প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ তামাক কোম্পানির জন্য একটি ‘সেফ হ্যাভেন’ বা নিরাপদ স্বর্গে পরিণত হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের চেয়ে কোম্পানির মুনাফা বড় হতে পারে না—এই নীতিতে অটল থেকে সরকারকে এখন কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।










