Home আন্তর্জাতিক আফগানিস্তানে ‘জীবনের বদলে জীবন’: আদালতের নির্দেশে বাবার খুনিকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল...

আফগানিস্তানে ‘জীবনের বদলে জীবন’: আদালতের নির্দেশে বাবার খুনিকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল ১৩ বছরের কিশোর

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিয়া প্রদেশে হাজারো মানুষের সামনে এক ১৩ বছরের কিশোর তার পরিবারের সদস্যের হত্যাকারীকে নিজের হাতে গুলি করে হত্যা করেছে। তালেবান সরকারের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং ইসলামি শরিয়াহ আইনের ‘কিসাস’ নীতি অনুযায়ী মঙ্গলবার এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ঘটনার বিস্তারিত
পাকতিয়া প্রদেশের গার্দেজ শহরের একটি স্পোর্টস স্টেডিয়ামে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ছিল মীরওয়াইস। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ওই কিশোরের পরিবারের এক সদস্যকে হত্যা করেছিলেন। আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার বা ‘কিসাস’ দাবি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্টেডিয়ামটি সাধারণ মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। তালেবান কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে ওই কিশোরের হাতে একটি একে-৪৭ (কালাশনিকভ) রাইফেল তুলে দেওয়া হয়। এরপর ওই কিশোর খুব কাছ থেকে অভিযুক্ত মীরওয়াইসকে লক্ষ্য করে তিনটি গুলি চালায়, এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

আইনি প্রক্রিয়া ও কিসাস
তালেবানের সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে জানায়, এই মামলাটি তিনটি ভিন্ন আদালতে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই এই দণ্ড কার্যকর করা হয়।

ইসলামি শরিয়াহ আইনে ‘কিসাস’-এর বিধান অনুযায়ী, যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে নিহতের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকারীর প্রাণদণ্ড কার্যকর করার অধিকার রাখেন। তবে পরিবার চাইলে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিতে পারে বা রক্তের বিনিময়ে অর্থ (দিয়াত) গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিহতের পরিবার ক্ষমা বা অর্থ গ্রহণ না করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়।

উপস্থিতি ও পরিবেশ
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন তালেবান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, যার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানিও ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে উপস্থিত জনতাকে মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছিল, যাতে ঘটনার কোনো ভিডিও ধারণ করা না হয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
তালেবান ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানে জনসমক্ষে বেত্রাঘাত ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার এ ধরনের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং নিষ্ঠুর ও অমানবিক শাস্তি। তবে তালেবান সরকার এসব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, তারা আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করছে এবং এতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রেক্ষাপট
এই ঘটনাটি আফগানিস্তানে তালেবানের কঠোর বিচার ব্যবস্থার বার্তা দিচ্ছে। বিশেষ করে একটি ১৩ বছরের শিশুর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বিচার কার্যকর করার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।