বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, লালমনিরহাট: টানা বৃষ্টির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে শুরু করেছে তিস্তা নদী। রবিবার (১ জুন) সকালে ডালিয়া পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৬ মিটার, যা বিপৎসীমার মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত বাড়তে থাকা পানি দেখে তিস্তাপাড়ের চরাঞ্চলজুড়ে আবারও দেখা দিয়েছে নতুন করে বন্যার শঙ্কা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলে দিয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। এতে পানির গতি সাময়িক কমলেও নদীর পাশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বিশেষ করে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের বেশ কিছু চরাঞ্চলে নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউল হক জিয়া জানান, “টানা বর্ষণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।”
সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মহিষখোচা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ফসলের জমি প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে ভূট্টা ও বাদামের ক্ষেতগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে। ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, “পানি হঠাৎ করে খুব বেশি বাড়ছে। অনেক কৃষক এবারও পথে বসতে পারেন।”
স্থানীয় চরবাসীর দুর্ভোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে ডাউয়াবাড়ী এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, “বন্যা এলে সবকিছু শেষ হয়ে যায়। ঘর, ফসল, গরু কিছুই থাকে না। এই আতঙ্কেই প্রতিবার দিন কাটাই।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ বিপজ্জনক নয়। তবে তিস্তার পানি যেভাবে বাড়ছে, আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে যাতে দ্রুত পানি নিঃসরণ সম্ভব হয়।”
প্রতিবছরই বর্ষা এলেই তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বিশেষ করে চরাঞ্চলের ৭৬টি গ্রামের হাজারো পরিবার বন্যার প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত হন। চলতি বর্ষায় পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয়দের আতঙ্ক এবং দুর্ভোগের চিত্র ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।