Home First Lead বিপদসীমার কাছে তিস্তা, সিলেট ময়মনসিংহে আগাম সতর্কতা

বিপদসীমার কাছে তিস্তা, সিলেট ময়মনসিংহে আগাম সতর্কতা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও মধ্যাঞ্চলের শেরপুর জেলায় দেখা দিয়েছে প্লাবন পরিস্থিতি। এরই মধ্যে কুড়িগ্রামের উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি তিস্তার পানি বেড়ে নিমজ্জিত হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের বাদাম, ধান, কাউন, শাকসবজি ও মরিচসহ নানা ফসল তলিয়ে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখা গ্রামের কৃষক আমিনুর ইসলাম জানান, তিনি ঋণ নিয়ে ১০ বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করেন। সেই বাদামের গাছ এখনও পূর্ণতা পায়নি, এর মধ্যেই ভারী বৃষ্টিপাত ও ঢলে তাঁর সব জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। একইভাবে উলিপুর উপজেলার চর গোড়াই পিয়ার গ্রামের কৃষক বাহার আলী জানান, তাঁর এক একর বাদামের খেত সম্পূর্ণভাবে পানির নিচে।

কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, তিস্তার চরে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদিত হয়। অথচ নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর চরের কৃষকরা কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন। অথচ এখনো পর্যন্ত এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫০ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে ৯১২ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। শুধু বাদাম ক্ষেতই নয়, পানিতে তলিয়ে গেছে ধান ও অন্যান্য রবিশস্যের জমিও।

এদিকে রংপুর অঞ্চলে গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তিস্তা নদীর ডালিয়া, গংগাচড়া, কাউনিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা বিপদসীমার কাছাকাছি চলে গেছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে শুধু কুড়িগ্রাম নয়, আশপাশের জেলাগুলোতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

অন্যদিকে সিলেট অঞ্চলে মাত্র তিন ঘণ্টায় ১০১ মিলিমিটার এবং সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের একাধিক ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সিলেট মহানগরীতেও দিনভর টানা বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।

শেরপুর থেকেও পাওয়া খবরে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত চেল্লাখালি নদীর পানি নালিতাবাড়ীর বাতকুচি পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান জানান, টানা বৃষ্টিপাতে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল।

তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষিজমি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ ও দ্রুত পানি নিষ্কাশনের দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।