Home Third Lead সরবরাহ উদ্বৃত্ত আর নিষেধাজ্ঞার দ্বন্দ্বে দোলাচলে তেলের বাজার

সরবরাহ উদ্বৃত্ত আর নিষেধাজ্ঞার দ্বন্দ্বে দোলাচলে তেলের বাজার

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তেলের দাম বাড়িয়ে তুলেছে, অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ উদ্বৃত্ত বাজারে চাপ তৈরি করছে। ফলস্বরূপ, বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার এখন এক ধরনের মিশ্র সংকেতের মুখে।

সর্বশেষ লন্ডনভিত্তিক ব্রেন্ট ক্রুডের দর প্রতি ব্যারেল ৬৫ থেকে ৬৬ ডলারের মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। অপরদিকে, ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম ৬১ থেকে ৬২ ডলারের মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। গত এক সপ্তাহে দুই সূচকের দাম গড়ে প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত জুনের পর সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক উত্থান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন রাশিয়ার বৃহৎ তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বাজারে সাময়িক ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে অপরদিকে, তেল উৎপাদক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা উৎপাদন বাড়াতে প্রস্তুত। ফলে বাজারে দাম কিছুটা স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা জানিয়েছে, বৈশ্বিক বাজারে বর্তমানে সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বেশি। বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় তেলের ব্যবহার বাড়ছে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে কমছে। ফলে ভবিষ্যতে তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম ৬২ ডলার ব্যারেল এবং ২০২৬ সালে তা নেমে আসতে পারে ৫২ ডলার ব্যারেলে। অর্থাৎ বাজারে যে সাময়িক উর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম।

তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ভূরাজনৈতিক কোনো বড় অঘটন ঘটলে বিশেষ করে রাশিয়া, ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়লে বাজার হঠাৎ করে আবারও উর্ধ্বমুখী হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ওঠানামা তাৎপর্যপূর্ণ। দেশটি এখনো বড় পরিসরে তেল আমদানিনির্ভর, ফলে আন্তর্জাতিক দামের পরিবর্তন স্থানীয় জ্বালানি ও পরিবহন খরচে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং কৌশলগত তেল মজুদ বাড়ানো বাংলাদেশের জন্য এখন সময়োচিত পদক্ষেপ হতে পারে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, তেলের বাজারে এখন এক অদ্ভুত ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করছে। সরবরাহের প্রাচুর্য ও রাজনৈতিক চাপের টানাপোড়েনে দাম একদিকে বাড়ছে, আবার অন্যদিকে নেমেও আসছে। বিনিয়োগকারী ও আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য এটি সতর্কতার সময়।