বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পে চলতি অর্থবছরে দ্বিগুণ হারে প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, বহুমুখী বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ এই অগ্রগতিকে বড় সংকটে ফেলেছে। জাপানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি, ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা একসঙ্গে মিলে এই শিল্পকে একপ্রকার ‘পারফেক্ট স্টর্ম’-এর মুখে ফেলেছে।
গত ১৭ মে ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ একাধিক পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই পদক্ষেপ এসেছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সূতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায়। ফলে প্রায় ৪২ শতাংশ রপ্তানি পণ্যের চালান আটকে গেছে, যা এখন বিকল্প পথ হিসেবে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুই-ই বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, আরএমজি খাত সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে এবং দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এ খাত থেকে।
তবে ভারতের নিষেধাজ্ঞা শুধু বাণিজ্য নয়, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন চাপ তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক ড. নাজমুল আহসান বলেন, “দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অঘোষিত বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সূতা আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ ছিল একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, কিন্তু ভারতীয় পাল্টা ব্যবস্থা আমাদের রপ্তানিকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ শ্রম অধিকার সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান অস্থিরতা এবং আসন্ন বাজেটকে ঘিরে শ্রমিকদের আন্দোলনও রপ্তানি পরিবেশকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। কারখানাগুলোর একাংশে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
তবে এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের পোশাক খাত এবছর প্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা অনেকের কাছেই আশাব্যঞ্জক মনে হলেও, ব্যবসায়ীরা বলছেন এই ধারা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে যদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা প্রশমিত না হয়।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক- দুই দিক থেকেই আমরা সংকটে পড়েছি। যথাযথ নীতিগত সহায়তার অভাব, উচ্চ সুদের হার, গ্যাস সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা আমাদের খাতকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণে অনেক টেক্সটাইল মিলের উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে গেছে। এর ওপর রয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও সরকারি কর্মচারীদের কর্মবিরতির মতো ধারাবাহিক ধর্মঘট, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বহুপাক্ষিক কূটনীতি, সাপ্লাই চেইন বৈচিত্র্যকরণ এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই হবে পোশাক শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।
১. 📢 পোশাক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মতামত শেয়ার করুন। নিচে কমেন্ট করে আলোচনা শুরু করুন।
২. 🔍 বাণিজ্য ও শিল্পসংক্রান্ত সর্বশেষ আপডেট পেতে বিজনেসটুডে২৪.কম নিয়মিত ভিজিট করুন।