Home সারাদেশ এক ভোরেই নিভে গেল চার প্রাণ, থমকে গেল চারটি পরিবার

এক ভোরেই নিভে গেল চার প্রাণ, থমকে গেল চারটি পরিবার

ঘন কুয়াশা ছিল না, হঠাৎ কোনো ঝড়ও ওঠেনি। তবু ভোরের আলো ফোটার আগেই থেমে গেল চারটি জীবনের যাত্রা।

বিজেনসটুডে২৪ প্রতিনিধি, দিনাজপুর: ঘন কুয়াশা ছিল না, হঠাৎ কোনো ঝড়ও ওঠেনি। তবু ভোরের আলো ফোটার আগেই থেমে গেল চারটি জীবনের যাত্রা। দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের ২৬ মাইল বাবলু ফার্ম এলাকায় সোমবার সকালে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা। প্রাণ গেল চারজনের, আহত হয়েছেন আরও তিনজন।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর জুলফিকার আলী (৪৬) ও সহকারী অডিটর ইমরুল হোসেন (৪৫)। জীবনের নিয়মিত দিন শুরু করতে কর্মস্থলের দিকে রওনা হয়েছিলেন তারা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বন্ধু দেলোয়ার হোসেন (৫০) ও গাড়িচালক আরিফুল ইসলাম মানিক (৩২)। একটি নোয়া মাইক্রোবাসে চেপে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, ফেরার কথা ছিল দিনের শেষে, কিন্তু ফিরলেন না আর।

সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী ট্রাক মুখোমুখি ধাক্কা দেয় তাদের মাইক্রোবাসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষটি এতই ভয়াবহ ছিল যে গাড়িটির সামনের অংশ মুহূর্তেই দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দুইজন। হাসপাতাল নেওয়ার পথেই মারা যান আরও একজন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন চতুর্থজন।

এই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে লড়ছেন তিনজন ঠাকুরগাঁওয়ের মিজানুর রহমান সরকার (৫০), আল মামুন (৪০) এবং দিনাজপুরের নাহিদ হোসেন (৩২)। তাদের অনেকেই জানেন না যে সঙ্গীরা কেউ আর বেঁচে নেই।

জুলফিকার আলী ও ইমরুল হোসেন, ঠাকুরগাঁও জেলা হিসাব অফিসের চেনা মুখ। অফিসে তাঁরা ছিলেন নিখুঁত কাজের মানুষ, আর বাইরে প্রাণখোলা বন্ধু। সহকর্মীরা বলছেন, “ওরা সবসময় হাসিমুখে থাকত। কারও কোনো সমস্যায় এগিয়ে যেত সবার আগে।”

ড্রাইভার মানিকের বয়স মাত্র ৩২। সদ্য সংসার পেতে জীবন সাজানোর স্বপ্ন ছিল তার চোখে। নিয়মিত কাজ করেই পরিবার চালাচ্ছিলেন। এখন সেই পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।

সড়কে এমন মৃত্যু যেন প্রতিদিনের খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে একেকটি পরিবারের কান্না, একেকটি জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি।

এ দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু সেই সময়টুকুও বাঁচাতে পারেনি চারজনের প্রাণ। তাদের পরিবার এখন শোকস্তব্ধ, নিথর চারটি দেহ যখন ফিরে এসেছে শহরের গলিতে, চারটি ঘরে নেমে এসেছে স্থায়ী নীরবতা।