বলিউডের অন্ধকার পাতা
আমিরুল মোমেনিন: চকচকে পর্দার আড়ালে বলিউডের সঙ্গে অপরাধজগতের সংযোগ নিয়ে বহুদিন ধরেই নানা গুঞ্জন, গোপন ফিসফাস আর প্রকাশ্য বিস্ফোরণ দেখা গেছে। বিশেষ করে নব্বই দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বহু সিনেমা নির্মাণ, শিল্পী নির্বাচন, এমনকি বক্স অফিস ফলাফল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হয়েছে মাফিয়া ছায়া, দাউদ ইব্রাহিমের হস্তক্ষেপ, গোপন বিনিয়োগ ও ভয়ংকর হুমকি দিয়ে।
এই সেই অন্ধকার অধ্যায়, যা কখনো আদালতের ডকেটে, কখনো গণমাধ্যমের পাতায়, আবার কখনো ইতিহাসের পর্দার আড়ালে থেকে গেছে।
১. দাউদ ইব্রাহিম ও বলিউড – এক অদৃশ্য দখলদারি
১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণের পর ভারতের সবচেয়ে কুখ্যাত গ্যাংস্টার দাউদ ইব্রাহিম-এর নাম উঠে আসে বলিউডে অর্থ বিনিয়োগ, হুমকি ও নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে।
বলা হয়, বেশ কিছু বড় বাজেটের ছবির প্রযোজনায় তার বা তার লোকদের গোপন অর্থ জড়িত ছিল।
একাধিক নির্মাতা, অভিনেতা ও গায়ককে হুমকি ফোন দেওয়া হয়—নির্দিষ্ট চরিত্রে অভিনয় করতে, গান গাইতে কিংবা সিনেমায় নাম দিতে। কেউ কেউ ভয়ে সম্মত হন, কেউ আবার দেশ ছেড়ে চলে যান।
২. গুলির শব্দে কেঁপে উঠেছিল বলিউড
২০০১ সালে প্রযোজক রাকেশ রোশন (হৃত্বিক রোশনের বাবা) গুলিবিদ্ধ হন। পরে জানা যায়, আন্ডারওয়ার্ল্ড তাকে টাকা চেয়ে হুমকি দিয়েছিল।
একইভাবে গায়ক সনু নিগম, অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী, প্রযোজক ভিদু বিনোদ চোপড়া-কেও হুমকি দেওয়া হয়।
অনেকেই চুপ থেকেছেন, কারণ বলিউডের একাংশ তখন বিশ্বাস করত—মাফিয়াদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই টিকে থাকতে হয়।
৩. সঞ্জয় দত্ত: বাস্তব ও সিনেমার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এক চরিত্র
১৯৯৩ সালের বিস্ফোরণ মামলায় অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত-এর নাম উঠে আসে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দাউদ ঘনিষ্ঠদের দেওয়া একে-৫৬ রাইফেল তিনি নিজের বাসায় রেখেছিলেন। পরে আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের সাজা দেয়।
এই ঘটনা বলিউডে দাউদের প্রভাবের একটি বহুল আলোচিত নজির হয়ে থাকে।
৪. চাঁদাবাজি ও কালো টাকা – সিনেমার অদৃশ্য বিনিয়োগ
অনেক সময় দেখা গেছে, একাধিক চলচ্চিত্রে অজানা উৎস থেকে অর্থ আসছে, যার কোনও নির্ভরযোগ্য হিসাব নেই। অর্থ পাচারের অভিযোগে কয়েকজন নির্মাতা ও প্রযোজককে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে আয়কর বিভাগ ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তির সময় আয়োজিত “লঞ্চ পার্টি” বা “প্রিমিয়ার নাইট” অনেক সময়ই হতো আন্ডারওয়ার্ল্ডের গ্যাংস্টারদের দেখানো সহানুভূতির ফল। এমন দাবিও উঠে এসেছে বিভিন্ন তদন্তে।
৫. আজকের বলিউড কি সত্যিই মুক্ত?
বর্তমানে বলিউড অনেকটাই প্রাতিষ্ঠানিক হয়েছে। কর্পোরেট প্রযোজক, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের ফলে এখন পুরোনো মাফিয়াচক্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ অনেক কমে গেছে।
তবে অনেকেই বলেন, ছায়া এখনও পুরোপুরি সরে যায়নি। হয়তো নাম বা কৌশল বদলেছে, কিন্তু ক্ষমতার খেলা এখনো চলে—নামী স্টার, রাজনৈতিক সংযোগ, মিডিয়া কভারেজ—সব মিলে বলিউড এখনও ক্ষমতার দোলনায় দুলছে।
📣 মতামত দিন, শেয়ার করুন
আপনার মতে, বলিউড কি সত্যিই মাফিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হয়েছে? না কি শুধু মুখোশ বদলে গেছে?