Home সারাদেশ দিঘাপতিয়ার জমিদার বাড়িতে মিলল গোপন সুড়ঙ্গ

দিঘাপতিয়ার জমিদার বাড়িতে মিলল গোপন সুড়ঙ্গ

ছবি: সংগৃহীত

কাজ স্থগিত করল প্রশাসন

 বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়া এলাকায় দিঘাপতিয়ার রাজবংশের একটি পুরোনো বাড়ি ভাঙার সময় নিচতলায় গোপন সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) নিলামে বিক্রি হওয়া ওই বাড়িটি ভাঙার সময় এই সুড়ঙ্গ বেরিয়ে এলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনায় বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাড়িটি ভাঙার কাজ স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহাসিক এই বাড়িটি দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায় নির্মাণ করেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, মহারানি হেমন্তকুমারী (১৮৬৯-১৯৪২) পুঠিয়া থেকে রাজশাহী শহরে এলে এই বাড়িতেই অবস্থান করতেন। বাড়িটির সামনে একটি দুর্লভ নাগলিঙ্গম ফলের গাছও রয়েছে।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত হিসেবে মাত্র ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় নিলামে তোলা হয়। নিলামে কিনে নেওয়া ব্যক্তিরা বাড়িটি ভাঙা শুরু করলে মেঝের নিচে সুড়ঙ্গ সদৃশ স্থাপনা বেরিয়ে আসে। বাড়ি ভাঙার তদারকিতে থাকা মো. অপু বলেন, ‘এই সুড়ঙ্গ মূলত প্রাকৃতিক এসির কাজ করত। আগের দিনে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ঘর ঠান্ডা রাখতে এমন কৌশলে সুড়ঙ্গে পানি জমিয়ে রাখতেন।’

এদিকে ঐতিহাসিক এই স্থাপনা ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজশাহীর নাগরিক সমাজ ও ইতিহাসপ্রেমীরা। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। তারা মিঞাপাড়ায় রাজা হেমেন্দ্র কুমারের বসতভিটা, চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ও রজনীকান্ত সেনের ভিড়াসহ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের দাবি জানান।

রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট গবেষক ড. তসিকুল ইসলাম রাজা বলেন, ‘এই বাড়িটির প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি সরকারের সংরক্ষণ করা উচিত ছিল।’

বিষয়টি নজরে আসার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন। বুধবার দুপুরে বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেন। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাড়িটির ইতিহাস পর্যালোচনা করেছি। এর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য যাচাইয়ের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকলে এটি সংরক্ষণ করা হবে।’

ভূমি অফিসের তথ্যানুযায়ী, ১৯৮১ সালে এই জমিটি শত্রু সম্পত্তি (ভিপি) হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। যদিও ১৯৭২ সালের আরএস রেকর্ডে মালিক হিসেবে সন্দীপ কুমার রায়ের নাম রয়েছে। সর্বশেষ বাড়িটি প্রয়াত ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের নামে ইজারা দেওয়া ছিল, যা বাতিল করে সম্প্রতি নিলামে তোলা হয়।