আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নয়াদিল্লি: রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় (১০ নভেম্বর) লালকেল্লার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতে আকস্মিক বিস্ফোরণে আটজনের মৃত্যু হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরই হরিয়ানার ফরিদাবাদে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, যা সাধারণত আরডিএক্স তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশও উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। ফলে তদন্তকারীরা এখন এই তিনটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজছেন।
নাশকতার আশঙ্কা ও তদন্তের নতুন দিক
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত নাশকতার অংশ হতে পারে। এনআইএ-সহ একাধিক তদন্তকারী সংস্থা ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে। তদন্তকারীদের মতে, দুটি প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার পরই কি সন্দেহভাজনরা স্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল? না কি ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিস্ফোরক নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল? তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণা করা হচ্ছিল, জনবহুল এলাকায় পরিকল্পনামাফিক গাড়ি বিস্ফোরণের ছক ছিল। তবে সময় ও স্থানের প্রেক্ষিতে এখন সেই তত্ত্বটি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
‘কমলা আগুন’ রহস্য ও ফরিদাবাদ সংযোগ
বিস্ফোরণস্থলের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গাড়িটি বিস্ফোরণের পর ‘কমলা রঙের আগুন’ ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তকারীদের দাবি, সাধারণত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে এমন আগুন সৃষ্টি হয়। ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকের সঙ্গে এই রাসায়নিকের মিল পাওয়ায় দুই ঘটনার মধ্যে সংযোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একটি সূত্রের মতে, একই ধরনের রাসায়নিক উপাদান দিল্লির বিস্ফোরিত গাড়িতেও ব্যবহৃত হয়েছিল।
বিস্ফোরিত গাড়ির মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা
যে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ ঘটে, সেটির নম্বর প্লেট হরিয়ানার। আশ্চর্যের বিষয়, গত ২০ সেপ্টেম্বর সেই গাড়ির মালিককে বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা করা হয়েছিল। পরে জানা যায়, গাড়িটি মোহাম্মদ সলমন নামে এক ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গাড়িটি তিনি পুলওয়ামার এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছিলেন, যদিও নামবদল হয়নি। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, ওই গাড়ির বর্তমান ব্যবহারকারী ছিলেন পুলওয়ামার চিকিৎসক ওমর মহম্মদ।
কাশ্মীরের গোষ্ঠী ও ফরিদাবাদের বিস্ফোরক সংযোগ
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, কাশ্মীরে সম্প্রতি সক্রিয় এক গোষ্ঠী সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে নাশকতার ছক তৈরি করছিল। এই সূত্রে শ্রীনগর থেকে ১৯ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় চিকিৎসক আদিল আহমেদ র্যাদারকে, যিনি পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। তার জেরায় আরও কয়েকজন চিকিৎসকের নাম উঠে আসে—আরিফ নিসর দার, ইয়াসির-উল-আসরফ, মকসুদ আহমেদ দার, ইরফান আহমেদ এবং জামির আহমেদ। এই জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই চিকিৎসক মুজাম্মিল আহমেদের নাম উঠে আসে, যিনি ফরিদাবাদের বিস্ফোরক সংগ্রহের তথ্য প্রকাশ করেন।
জাতীয় নিরাপত্তায় নতুন প্রশ্ন
দিল্লির এই বিস্ফোরণ এবং একই দিনে উদ্ধার হওয়া বিপুল বিস্ফোরক সামগ্রী ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং একটি বৃহত্তর নাশকতার ছকের ইঙ্গিত বহন করছে। এনআইএ, দিল্লি পুলিশ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের সমন্বিত তদন্ত এখন এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও উদ্দেশ্য উন্মোচনের দিকে মনোনিবেশ করেছে।










