বিনোদন ডেস্ক: আরব বিশ্ব তথা পুরো মুসলিম বিশ্বে লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে নিয়ে রয়েছে মিশ্র অনুভূতি। একটা বড় অংশ যেমন তাদের অত্যাচারী শাসক হিসেবে ঘৃণা করত, তেমনি তাদের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি অনেককেই সেই ধারণা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। দোহা চলচ্চিত্র উৎসবে এই দুই একনায়কের শাসনামল আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে দুটি বিশেষ সিনেমার কল্যাণে—‘দ্য প্রেসিডেন্টস কেক’ এবং ‘মাই ফাদার অ্যান্ড গাদ্দাফি’।
দ্য প্রেসিডেন্টস কেক: সাদ্দামের ইরাক ও এক শিশুর গল্প
ইরাকি তরুণ নির্মাতা হাসান হাদির প্রথম সিনেমা ‘দ্য প্রেসিডেন্টস কেক’ উৎসবে দর্শকদের চমকে দিয়েছে। ইরাক, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই সিনেমাটি ইতিমধ্যে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন ক্যামেরা’ পুরস্কার জিতেছে এবং অস্কারে ইরাকের অফিশিয়াল এন্ট্রি হিসেবে জমা পড়েছে।
১৯৯০-এর দশকের ইরাকের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমাটি লামিয়া নামের নয় বছরের এক এতিম মেয়েকে ঘিরে আবর্তিত। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ইরাকে তখন তীব্র অভাব। এর মধ্যেই লামিয়াকে তার স্কুলের শিক্ষিকা নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্টের (সাদ্দাম হোসেন) জন্মদিনের জন্য একটি কেক নিয়ে আসতে। দাদীর সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও লামিয়ার সেই কেক জোগাড়ের প্রাণান্তকর চেষ্টা এবং দত্তক হওয়া থেকে বাঁচার লড়াই সিনেমার মূল উপজীব্য।
নির্মাতা হাসান হাদি জানান, নব্বইয়ের দশকের সেই অবরোধ ইরাকের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। তিনি বলেন, “সেই অবরোধের কারণে প্রায় ৫ লাখ শিশু মারা গিয়েছিল। ইরাকি জনগণ ছিল স্বৈরতন্ত্র, যুদ্ধ এবং অবরোধ—সবকিছুরই ভুক্তভোগী।”
মাই ফাদার অ্যান্ড গাদ্দাফি: নিখোঁজ বাবার সন্ধানে
অন্যদিকে, ‘মাই ফাদার অ্যান্ড গাদ্দাফি’ তথ্যচিত্রটি একজন মেয়ের তার বাবাকে খোঁজার করুণ কাহিনী। পরিচালক জিহানের বাবা মনসুর রশিদ কিখিয়া ছিলেন গাদ্দাফির একসময়ের মন্ত্রী ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী, যিনি পরে ভিন্নমতাবলম্বী হয়ে ওঠেন। ১৯৯৩ সালে কায়রোতে একটি মানবাধিকার সম্মেলনে অংশ নেয়ার সময় তিনি নিখোঁজ হন।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর, ২০১২ সালে গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ার একটি খামারবাড়ির ফ্রিজারে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। তথ্যচিত্রটিতে বাবার খোঁজে পরিবারের দীর্ঘ সংগ্রামের পাশাপাশি উঠে এসেছে লিবিয়ার ঔপনিবেশিক ইতিহাস, ইতালীয় দখলদারিত্ব, গৃহযুদ্ধ এবং তেলের আবিষ্কারের কথা।
জিহান প্রায় ৯ বছর ধরে ৬০ জনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন। এটি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও প্রদর্শিত হয়েছে।
এই দুটি সিনেমা দোহা চলচ্চিত্র উৎসবে স্বৈরাচারী শাসনের মানবিক ও ঐতিহাসিক দিকগুলো নতুন করে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছে।










