Home আন্তর্জাতিক রক্ত আর ধ্বংসস্তূপে ঢাকা গাজা: এক রাতে নিভল শত প্রাণ

রক্ত আর ধ্বংসস্তূপে ঢাকা গাজা: এক রাতে নিভল শত প্রাণ

ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরে ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় মাত্র ১২ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০০-র বেশি মানুষ। শুক্রবার গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটি নতুন করে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গাজার উত্তরের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া এবং গাজা সিটির আশেপাশে তীব্র গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালায়। এসব হামলায় বহু আবাসিক ভবন ধসে পড়ে, অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন। উদ্ধারকারীরা জানায়, এখনো বহু মরদেহ উদ্ধার হয়নি।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মহম্মদ আবু সালমিয়াহ বলেন, “আমরা এমন ধ্বংস আগে কখনো দেখিনি। শিশু, নারী, বৃদ্ধ কাউকেই রেহাই দেওয়া হয়নি। বহু পরিবারের গোটা সদস্যপরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।” তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

এই অবস্থাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা প্রশাসন। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল নির্বিচারে বেসামরিক এলাকাগুলোতে হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে নিশানা করছে। অপরদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ‘হামাসের সামরিক কাঠামো’ লক্ষ্য করেই আঘাত হানছে।

তবে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মতে, ইসরায়েলের এসব হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী হতে পারে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ গাজায় এই সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে, চিকিৎসা সহায়তা, খাদ্য, ওষুধ এবং পানি সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো গাজা উপত্যকা। অবরুদ্ধ অঞ্চলের হাসপাতালগুলো এখন আর হতাহতদের সামাল দিতে পারছে না।

গাজার উত্তরাঞ্চলে এই মৃত্যুমিছিল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের আরও ভয়াবহ দিক উন্মোচন করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই মনে করছেন, অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশ না হলে পরিস্থিতি এক অভূতপূর্ব গণহত্যার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবনের আর্তনাদ

গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা আমিনা খলিল বলেন, “রাতে বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণে পুরো ঘর কাঁপতে থাকে। মুহূর্তেই অন্ধকার, ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় চারপাশ। আমি চোখের সামনে আমার স্বামী আর ছেলেকে হারালাম। শুধু আমি আর মেয়ে মরিয়ম বেঁচে আছি।”

অন্য এক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, ১৭ বছরের ইয়াসিন সালেম বলেন, “আমরা তখন ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ কিছু বোঝার আগেই বাড়ির ছাদ আমাদের মাথার উপর পড়ে। মা-বাবা, ভাই কেউ নেই আর। শুধু আমি আর ছোট ভাই জীবিত বের হতে পেরেছি। সিভিল ডিফেন্সের লোকেরা না এলে, আমরাও হয়তো পাথরের নিচেই মরে যেতাম।”

এই অবস্থাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা প্রশাসন।