বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) নতুন ট্যারিফ সিডিউল নিয়ে বাংলাদেশ কন্টেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) কর্তৃক দায়ের করা রিট পিটিশন আমলে নিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। এতে আদালত বিতর্কিত ট্যারিফ সিডিউলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিসিএসএ-এর দাবিগুলো ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। শুনানিতে বিসিএসএ-এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ফররুখ রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও রহমান’স চেম্বার্সের প্রধান।
আদালতের নির্দেশনা
আদালত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিপক্ষদের উদ্দেশে রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, কেন এস.আর.ও. নং ৩৬৪-আইন/২০২৫ (নতুন ট্যারিফ সিডিউল) বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ট্যারিফ সিডিউলটি বাতিলের দাবিতে বিসিএসএ-এর পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগ আপাতদৃষ্টিতে (prima facie) গ্রহণযোগ্য।
একই সঙ্গে আদালত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন বিসিএসএ-এর ১৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের চিঠিতে উত্থাপিত আপত্তি ও দাবি ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে। ওই চিঠিতে সংস্থাটি নতুন ট্যারিফ সিডিউল বাতিল ও প্রত্যাহারের জন্য বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং যুক্তি প্রদান করেছিল।
বিতর্কের মূল প্রেক্ষাপট
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ সিডিউল ১৫ অক্টোবর ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। বিসিএসএ অভিযোগ করেছে, এই ট্যারিফে পরিচালন ব্যয় গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে, যা শিপিং শিল্পের ওপর অযৌক্তিক আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে। সংস্থার দাবি, চবকের পরিচালন দক্ষতা এবং সেবার মান উন্নয়নের আগে এমন ব্যাপক বৃদ্ধি অগ্রহণযোগ্য।
রিটে বিসিএসএ যুক্তি দেয় যে, বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় ১৯০৮ সালের বন্দর আইনের অধীন বাধ্যতামূলক নোটিশের সময়সীমা ও পরামর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। ফলে এটি আইনি ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রশাসনিকভাবে অবৈধ।
পরবর্তী আইনি ধাপ
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন আইন অনুযায়ী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিসিএসএ-এর দাবিগুলোর লিখিত জবাব দিতে বাধ্য। এরপর রিটের ওপর পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ট্যারিফ বৃদ্ধির বৈধতা বিচারিকভাবে পর্যালোচিত হবে।
তবে আদালত এই পর্যায়ে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেননি। অর্থাৎ, নতুন ট্যারিফ আপাতত কার্যকর থাকবে। তবুও আদালতের রুল জারি হওয়ায় বিষয়টি এখন বিচারিক পর্যালোচনার অধীনে চলে গেছে, যা ভবিষ্যতে বন্দরের আর্থিক কাঠামো ও শিপিং শিল্পের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ কন্টেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) হলো দেশের কন্টেইনার শিপিং লাইনগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। এটি বাংলাদেশে পরিচালিত আন্তর্জাতিক শিপিং এজেন্টদের সমন্বয়ে গঠিত এবং দেশের মোট কন্টেইনারবাহিত কার্গোর ৯০ শতাংশেরও বেশি পরিচালনা করে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধির এই আইনি চ্যালেঞ্জ এখন সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনা ও শিপিং খাতের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে একটি নজিরবিহীন মামলায় পরিণত হতে পারে।