Home First Lead ১৪ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ, বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ

১৪ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ, বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক হার নির্ধারণ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর এবার ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা আগের ঘোষিত ৩৭ শতাংশের চেয়ে সামান্য কম। এই ঘোষণা ট্রাম্প নিজেই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ সোমবার দিয়েছেন।

আগের ঘোষণায় ২ এপ্রিল বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। তবে পূর্বের নির্ধারিত ৯ জুলাইয়ের পরিবর্তে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।

অন্যান্য ১৪ দেশের ওপর নতুন শুল্ক হার

যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ মোট ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার আরোপ করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে:

  • দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান: ২৫ শতাংশ
  • মিয়ানমার ও লাওস: ৪০ শতাংশ
  • দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩০ শতাংশ
  • মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়া: ২৫ শতাংশ
  • ইন্দোনেশিয়া: ৩২ শতাংশ
  • বসনিয়া: ৩০ শতাংশ
  • সার্বিয়া: ৩৫ শতাংশ
  • কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড: ৩৬ শতাংশ
  • কাজাখস্তান: ২৫ শতাংশ

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব দেশের সরকারের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন এবং চিঠিগুলো ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ প্রকাশিত হয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানান, ভবিষ্যতে আরও কিছু দেশের ওপর শুল্ক আরোপের চিঠি পাঠানো হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ট্রাম্পের চিঠি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদা যুক্ত হবে। বিশেষত, পণ্য যদি অন্য কোনো দেশ থেকে ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, সেগুলোর ওপরও একই হার শুল্ক আরোপ করা হবে।

তবে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যদি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সে পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ হবে না। এছাড়া, দ্রুত ও নিয়ম মেনে অনুমোদন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বাংলাদেশের রপ্তানি ও পাল্টা শুল্ক নিয়ে চলমান আলোচনা

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যার অধিকাংশ তৈরি পোশাক। ২ এপ্রিলের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তি করতে উদ্যোগ নিয়েছে। ২৮ দফা যোগাযোগের পর ওয়াশিংটনে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) বৈঠক করেন। প্রধান উপদেষ্টা দলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং দরকষাকষার মধ্য দিয়ে খসড়া চুক্তিতে সংশোধন প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, পাল্টা শুল্ক চুক্তির খসড়া নিয়ে ইতোমধ্যে দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রে মতামত পাঠানো হয়েছে। বৈঠকে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পথে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ তার মতামতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশ্ববাজার থেকে আমদানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, বিশেষত পেট্রোলিয়াম, তুলা, এলপিজি, সয়াবিন তেল, গম, এলএনজি প্রভৃতি পণ্যে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্য ও সামরিক কেনাকাটাও বাড়ানোর প্রস্তাব আছে। উদাহরণস্বরূপ, এলএনজি আমদানির জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় এবং আরও কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।

ট্রাম্পের সমগ্র শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপট

২ এপ্রিল ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্কের হারও প্রকাশ করেন। ভারতের ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ, চীনের ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ৪৪ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশের ওপরও উল্লেখযোগ্য হার আরোপ করা হয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, “বাণিজ্যে কখনো বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়”। যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে বিক্রি হয় খুব কম, যেখানে দেশগুলো নিজেদের গাড়ি দেশেই বেশি বিক্রি করে। তাই অন্যান্য দেশের মোটরযানে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।