বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: শিশিরভেজা সকালে, কুয়াশার পাতলা পর্দা সরিয়ে যেন প্রকৃতি নিজেই ঘোষণা করছে, এসেছে অগ্রহায়ণ, বাঙালির হৃদয়ের মাস, নবান্নের মহোৎসবের আবহ। আজ, অগ্রহায়ণের প্রথম দিন, চারদিকে সোনালি ধানের লহর, যেন সূর্যের রশ্মি মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় দুলছে ধানের শিষ, কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে আনন্দের। টলটলে শিশিরের ফোঁটায় মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করছে মাঠ, আর দূরের গ্রাম থেকে ভেসে আসছে ঢেঁকির তাল, ধান ভাঙার গান।
অগ্রহায়ণ, যার নামেই ‘প্রথম মাস’, অনাদিকাল থেকে এই মাস বাংলার কৃষি-সংস্কৃতির প্রাণ। আমন ধানের ফসল কাটার সময়, যখন মাঠ জুড়ে সোনার ফলন। কৃষকরা কাস্তে হাতে মাঠে নামেন, ধানের বোঝা কাঁধে করে ঘরে ফেরেন। বাড়ির উঠোনে ছড়িয়ে পড়ে নতুন ধানের মিষ্টি গন্ধ, আর শুরু হয় পিঠে-পুলির উৎসব। খেজুর গুড়ের রস সংগ্রহ করে তৈরি হয় নানা রকমের পিঠা—ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা। হিন্দু পরিবারে চলে পূজা-অর্চনা, কাকবলী দিয়ে পিতৃপুরুষকে স্মরণ। মুসলিম ঘরে দোয়া-মিলাদ, শিন্নি বিতরণ। নবান্ন যেন সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের মিলনমেলা, যেখানে অন্নের আনন্দ সকলকে এক করে।
কবি জীবনানন্দ দাশের কথায় মনে পড়ে: ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়… হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে।’ হ্যাঁ, নবান্ন যেন পুনর্জন্মের উৎসব, যেখানে পুরনো ফসলের শেষে নতুনের শুরু। রবীন্দ্রনাথের গানে: ‘ধরার আঁচল ভরে দিলে প্রচুর সোনার ধানে।’ আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে গ্রামীণ জনপদ—সবখানে মেলা বসেছে, পিঠার স্টল, লোকসংগীত।
যান্ত্রিকতার যুগেও নবান্নের আনন্দ অম্লান। কুয়াশায় ঢাকা সকাল, হিমেল বিকাল—প্রকৃতির এই রূপে বিভোর হয়ে যায় মন। গ্রামের মেয়েরা নতুন শাড়ি পরে, ছেলেরা গান গায়। এই উৎসব যেন বাঙালির আত্মা, যা কখনো হারায় না।
লোকায়ত গবেষকরা বলেন, নবান্নের ইতিহাস কৃষির সঙ্গে জড়িত। একসময় অগ্রহায়ণই ছিল বছরের প্রথম মাস। আজ এই দিনে, সবাইকে শুভকামনা, নবান্নের আনন্দে ভরে উঠুক আপনার ঘর!










