আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সন্ধ্যার নরম বাতাস, সৈকতের নোনাজলের গন্ধ আর এক টুকরো নির্জনতা-সবকিছুই মিলেমিশে একটুখানি স্বস্তি খুঁজতে চেয়েছিল এক তরুণী ও তাঁর বন্ধু। ওড়িশার গঞ্জাম জেলার গোপালপুর সমুদ্রসৈকত, যেখানে সারা বছর পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে, সেদিন ছিল উৎসবের রঙে রাঙানো। কিন্তু সেই উৎসবের রঙ মুহূর্তেই কালো অন্ধকারে রূপ নেয়, যখন দশজন উল্লসিত মুখে আসা যুবক দুজন নিরীহ মানুষের জীবনে নেমে আনল বিভীষিকা।
তরুণী তখন তাঁর পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে সৈকতের একটি তুলনামূলক নির্জন অংশে বসে গল্প করছিলেন। হয়তো তাঁরা কথা বলছিলেন জীবনের স্বপ্ন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কিংবা হয়তো এক চিলতে ভালবাসার ভাষা খুঁজছিলেন। ঠিক তখনই শুরু হয় দুঃস্বপ্ন। মোটরসাইকেলে এসে হাজির হয় দশজন যুবক। প্রথমে কটূক্তি, তারপর ছবি তোলা, আর তার পর প্রতিবাদ করতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা।
তরুণীর বন্ধু বাধা দিতে গেলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে, হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয় সৈকতের বালিতে। যে বন্ধুটি একটু আগে ভালোবাসার কথা শুনছিলেন, তিনি তখন পড়ে আছেন নিথর হয়ে, চোখের সামনে তাঁর সঙ্গিনীকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক পরিত্যক্ত বাড়ির দিকে।
সেই অন্ধকার ঘরটি হয়ে ওঠে নরকের প্রতীক। একের পর এক নৃশংসতা, কান্নার আর্তনাদ, অসহায়তা—সব মিলিয়ে এক দগদগে ক্ষত তৈরি করে দেয় শরীরে নয়, আত্মায়। তাঁর মুখ চেপে ধরা হয়, চিৎকার যেন গিলে নেয় রাতের নৈঃশব্দ্য। একবারও ক্ষমা চায় না কেউ, একটুও থামে না হিংস্রতা। মানবিকতার যে চিহ্নটুকু তারা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল, তাও যেন পথেই ফেলে এসেছে।
রক্তাক্ত, বিধ্বস্ত, ভেঙে পড়া শরীর নিয়ে ফিরে আসেন সেই তরুণী ও তাঁর আহত বন্ধু গোপালপুর থানায়। সাহস জোগাড় করে সব বলেন, জানান মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে নড়ে চড়ে বসে, শুরু হয় তল্লাশি।
এখন পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের সবাই সাবালক, সকলেই উৎসবে এসেছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে পুলিশ আশঙ্কা করছে, আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে এই নৃশংসতায়।
এই ঘটনা শুধু একটি তরুণীকে নয়, সমগ্র সমাজকে বিবর্ণ করে দিয়েছে। যে সৈকত একদিন ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছিল, সেদিন সেই সৈকত সাক্ষী রইল হিংস্রতার নির্মমতম রূপের। গোপালপুরের বাতাসে এখন শুধু নোনা গন্ধ নয়, ঘোরতর ব্যথার ছোঁয়াও মিশে আছে।
এই সমাজে কোথাও যেন একটা কিছু হারিয়ে গেছে। মানবিকতা কি তবে আর ফিরে আসবে না?