Home অন্যান্য আফ্রিকার নাইজেরিয়ান প্রিন্স স্ক্যাম – ৫০ লাখ ডলারের লোভ

আফ্রিকার নাইজেরিয়ান প্রিন্স স্ক্যাম – ৫০ লাখ ডলারের লোভ

ধারাবাহিক প্রতিবেদন: লটারি ও প্রেমের ফাঁদ

পর্ব ৭:

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:

আপনার ইনবক্সে কখনো কি এমন একটি ই-মেইল এসেছে—“আমি নাইজেরিয়ান এক প্রিন্স, বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে দেশের বাইরে, আমার ৫০ লাখ ডলার আটকে আছে ব্যাংকে। আপনি যদি সাহায্য করেন, তার কিছু অংশ আপনাকে দেব।”

এই বার্তাটি আজ আর নতুন নয়। কিন্তু একসময় এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত ও বিস্ময়কর ই-মেইল প্রতারণার হাতিয়ার। এর নাম—‘নাইজেরিয়ান প্রিন্স স্ক্যাম’।

প্রতারণার সূচনা

এই প্রতারণার ধরনটি ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে শুরু হলেও, ২০০০-এর দশকে ইন্টারনেটের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এটি ভয়াবহ মাত্রা পায়। প্রতারকরা নিজেকে নাইজেরিয়ার কোনো রাজপরিবারের সদস্য বা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে “আটকে থাকা বিপুল পরিমাণ অর্থ ছাড় করাতে সহায়তা” চায়।

এর বিনিময়ে ভুক্তভোগীকে প্রলুব্ধ করা হয় বড় অঙ্কের কমিশনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু টাকা ছাড় করাতে ‘আইনি খরচ’, ‘ক্লিয়ারেন্স ফি’, ‘ট্যাক্স’ ইত্যাদি নানা অজুহাতে একের পর এক অর্থ চাওয়া হয়। ফলে ধাপে ধাপে মানুষ হারায় হাজার হাজার ডলার।

একটি বাস্তব ঘটনা

২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ৬২ বছর বয়সী নারী, জেনিফার উইলসন, ই-মেইলে এক নাইজেরিয়ান ‘প্রিন্স’ এর কাছ থেকে একটি বার্তা পান। প্রিন্স জানায়, তার ৫০ লাখ ডলার আটকে আছে নাইজেরিয়ার একটি ব্যাংকে। জেনিফার বিশ্বাস করেন—একটি মানবিক সাহায্য করতে যাচ্ছেন। তিনি প্রথমে ১ হাজার ডলার পাঠান। তারপর আরও ৫ বার পাঠান নানা খাতে—মোট ২৫ হাজার ডলার।

পরবর্তীতে তদন্তে উঠে আসে, প্রিন্সের অস্তিত্ব নেই। যিনি মেইল করেছিলেন, তিনি নাইজেরিয়ার একটি সাইবার প্রতারক চক্রের সদস্য।

নামের আড়ালে বিশ্বজুড়ে প্রতারণা

এই স্ক্যাম এখন আর শুধু নাইজেরিয়ার নয়। ঘানার ব্যবসায়ী, কঙ্গোর জেনারেল, সিয়েরা লিওনের প্রিন্সেস, বা দক্ষিণ আফ্রিকার গোপন বিনিয়োগকারী—নানান পরিচয়ে একই কৌশলে প্রতারণা চলছে বিশ্বজুড়ে।

বিশ্বের বিভিন্ন সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা জানায়, এই একটি কৌশলেই প্রতি বছর ১০০ কোটিরও বেশি টাকার প্রতারণা হয়।

বাংলাদেশেও ঢুকেছে এই ফাঁদ

বাংলাদেশেও কিছু প্রবাসী বা ইংরেজি ভাষায় কম অভ্যস্ত ব্যক্তিরা এই ধরনের ই-মেইলে প্রতারিত হয়েছেন। বিশেষ করে ইমেইলের ভাষা, বিদেশি নাম, সরকারি কাগজের মতো দেখতে অ্যাটাচমেন্ট—এসব দেখে তারা বিশ্বাস করে ফেলেছেন।


👉 পরবর্তী পর্বে:

পর্ব ৮: চাকরির প্রতারণা – বিদেশি কোম্পানির নিয়োগপত্র, ভিসার ফি আর ভুয়া এজেন্টের কাহিনী
কাজের আশায় অনেকেই কীভাবে পড়ে যাচ্ছেন চাকরি দেওয়ার নামে ভয়াবহ প্রতারণার ফাঁদে—জানুন পরবর্তী পর্বে।


📢 আপনি কী ভাবছেন?

আপনার কি কখনো এমন ই-মেইল এসেছে, যেখানে বিপুল অর্থের প্রলোভন দেখানো হয়েছে?
কমেন্টে লিখুন সেই অভিজ্ঞতা—এতে অন্যের প্রতারণা থেকে বাঁচার পথ তৈরি হতে পারে।