বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, নাটোর: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নাটোর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা ঘিরে বিরল পারিবারিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন (পুতুল) বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই এলাকায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ।
ঘোষণার পরপরই তার ভাই ইয়াসির আরশাদ, যিনি একই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তার সমর্থকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ও গৌরিপুর মোড়ে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন, ফলে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ:
স্থানীয় সূত্র জানায়, মনোনয়ন ঘোষণার পর ইয়াসিরের সমর্থকদের ওপর ফারজানা শারমিনের অনুসারীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে বিএনপি কর্মী জিল্লুর রহমান আহত হন। তার রক্তাক্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে রাত ১০টার দিকে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, “মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং কেউ লিখিত অভিযোগও করেনি।”
মনোনয়ন ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটি ১৩টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। এর মধ্যে নাটোর-১ এ ফারজানা শারমিন (পুতুল), নাটোর-২ এ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, এবং নাটোর-৪ এ আব্দুল আজিজকে মনোনীত করা হয়।
ফারজানা শারমিনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তার সমর্থকেরা বলেন, “তিনি প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের রাজনৈতিক উত্তরসূরি, দল তাকে মূল্যায়ন করেছে।” অন্যদিকে ইয়াসির আরশাদের অনুসারীরা মনে করছেন, “দীর্ঘদিন মাঠে থাকা একজন তরুণ নেতার প্রতি অবিচার করা হয়েছে।”
নাটোরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া:
যেখানে নাটোর-১ আসনে উত্তেজনা, সেখানে নাটোর-২ আসনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়ন ঘোষণার পর কানাইখালি, আলাইপুর ও স্টেশনবাজার এলাকায় বিএনপি কর্মীরা আতশবাজি ফোটান, মিষ্টি বিতরণ করেন এবং আনন্দ মিছিল করেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, নাটোর-১ আসনের এই পারিবারিক বিভাজন বিএনপির নির্বাচনী শক্তিকে দুর্বল করতে পারে। বিশেষ করে পটল পরিবারের দুই সন্তানের ভিন্ন অবস্থান কর্মী-সমর্থকদের মনোভাবেও প্রভাব ফেলবে। কেউ কেউ এটিকে “পরিবারের ভেতরের ক্ষমতার টানাপোড়েন” হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন “রাজনৈতিক প্রজন্মের রূপান্তরের স্বাভাবিক ধাপ” এটি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাটোর-১ এখন রাজনীতির আলোচনায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দ্বন্দ্ব যদি দ্রুত নিরসন না হয়, তবে বিএনপির ঐক্য প্রশ্নের মুখে পড়বে এবং প্রতিপক্ষ দল এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।
আপনার মতামত কী?
আপনি কি মনে করেন পারিবারিক মনোনয়ন দ্বন্দ্ব বিএনপির নির্বাচনী সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে?
👉 নিচে মন্তব্য করে আপনার মতামত জানান — নাটোরের রাজনীতিতে এই পারিবারিক সংঘাত কতটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?










