Home আন্তর্জাতিক নিউইয়র্কে আজ মেয়র নির্বাচন: ব্যস্ত নগরজীবনে ভোটের উচ্ছ্বাস

নিউইয়র্কে আজ মেয়র নির্বাচন: ব্যস্ত নগরজীবনে ভোটের উচ্ছ্বাস

ছবি এ আই

মোস্তফা তারেক, নিউইয়র্ক: আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নগরী নিউইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেয়র নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন প্রধান প্রার্থী—ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া।

নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি অঞ্চলে সকাল ছয়টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে সন্ধ্যা নয়টা পর্যন্ত। প্রাথমিক ভোটে অংশ নিয়েছিলেন রেকর্ডসংখ্যক নাগরিক, যা এবারের নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি আগেই দলীয় প্রাইমারিতে এগিয়ে ছিলেন। প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতিনিধি এই তরুণ নেতা বাসাভাড়া নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহন খাতে সংস্কার ও সামাজিক ন্যায্যতার পক্ষে নীতিমালা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, “নিউইয়র্ক হতে পারে এমন এক শহর, যেখানে সাধারণ মানুষ নিরাপদে, স্বস্তিতে ও মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারবে।”

অন্যদিকে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালান আইনশৃঙ্খলা, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন ইস্যুতে। তাঁর বক্তব্য, “নিউইয়র্ক আবারও কর্মসংস্থানের রাজধানী হয়ে উঠতে পারে, যদি সঠিক নেতৃত্ব মেলে।”

রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া, যিনি আগে গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত, অপরাধ দমন ও পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কারকে তাঁর প্রচারের মূল প্রতিশ্রুতি হিসেবে তুলে ধরেছেন।

এই নির্বাচনের মূল ইস্যু ঘুরপাক খাচ্ছে তিনটি বিষয়ের চারপাশে—নগর জীবনের ক্রমবর্ধমান ব্যয়, বাড়ির ভাড়া ও অভিবাসন সংকট। নিউইয়র্ক সিটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় গত দুই বছরে ১১ শতাংশ বেড়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোটারদের মাঝে উদ্বেগ তৈরি করেছে। মামদানি এই খাতে সরকারিভাবে সহায়তা ও ভাড়ার নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অপরদিকে কুয়োমো এর পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিতে চান।

নিউইয়র্ক ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাটিক প্রভাবাধীন এলাকা। ফলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, জোহরান মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। তবু স্বাধীন প্রার্থী কুয়োমো এবং রিপাবলিকান স্লিওয়ার অংশগ্রহণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা বাড়িয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন শুধু শহরের নেতৃত্ব নয়—যুক্তরাষ্ট্রের নগর রাজনীতির দিকনির্দেশনাও বদলে দিতে পারে। বিশেষত প্রগতিশীল রাজনীতির শক্তি কতটা বাস্তবসম্মত সমর্থন পায়, তা এই ভোটের ফলেই স্পষ্ট হবে।

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বিশ্বব্যাপী নগরনীতির আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে। আবাসন সংকট, টেকসই পরিবহন, ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি ক্ষেত্রে মামদানির প্রস্তাবিত নীতিমালা সফল হলে, তা অন্য বড় শহরগুলোর জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।

ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে চলছে বলে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। প্রাথমিক ফল প্রকাশ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল থেকে। এবার দেখা যাবে—নিউইয়র্কবাসী কাকে বেছে নেন তাদের পরবর্তী মেয়র হিসেবে: তরুণ প্রগতিশীল নীতির মুখপাত্র, নাকি অভিজ্ঞ প্রশাসক।