Home বিনোদন নিউয়ারি: নেপালের হৃদয়ে গাঁথা এক জাতিগোষ্ঠীর গল্প

নিউয়ারি: নেপালের হৃদয়ে গাঁথা এক জাতিগোষ্ঠীর গল্প

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: নেপালের প্রাণকেন্দ্র কাঠমান্ডু উপত্যকা যেন ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। এই উপত্যকার বুকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বেঁচে থাকা একটি সম্প্রদায়ের নাম নিউয়ারি। এরা শুধু একটি জাতিগোষ্ঠী নয়, বরং নেপালের সংস্কৃতি, শিল্প ও নাগরিক জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

ঐতিহ্যগতভাবে নিউয়ারিরা ছিলেন ব্যবসায়ী, কারিগর ও স্থপতি। কাঠমান্ডুর প্রাচীন মন্দিরগুলোতে যে সূক্ষ্ম কাঠ ও পাথরের খোদাই দেখা যায়, তার অধিকাংশই এই সম্প্রদায়ের শিল্পীদের হাতে গড়া। তামা, ব্রোঞ্জ, কাঠ ও রূপার উপর দেবদেবীর মূর্তি তৈরি ছিল তাদের পেশার অংশ, যা আজো নেপালের ধর্মীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে নিউয়ারিরা আজ জড়িয়ে পড়েছে পর্যটন, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে।

নিউয়ারি বিয়ের প্রথা একাধিক স্তরে গঠিত, যার প্রতিটি পর্বেই রয়েছে ধর্মীয়তা, আচার ও নাটকীয়তা। ছোটবেলায় কন্যার ‘ইহি’ বিয়ে হয়। তা একপ্রকার প্রতীকী বিবাহ, যেখানে বেল ফলকে বর রূপে গ্রহণ করা হয়। এটি কন্যার সতীত্ব ও সামাজিক রীতির প্রতি এক প্রতিশ্রুতি। এরপর আসে ‘বাহ্রা বায়ু’। যেখানে কন্যা ১২ দিন আলাদা থাকে, যা তার নারীত্বে পদার্পণের প্রতীক। মূল বিবাহে বর ও কনে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে ওঠেন, আর বিয়ের আসর রূপ নেয় এক প্রাণবন্ত উৎসবে। ‘জুতো চুরি’র মজার খেলা, আত্মীয়দের ঠাট্টা আর সুস্বাদু খাবারের প্রতিযোগিতা যেন এটিকে শুধুই একটি বিবাহ নয়, বরং সম্পূর্ণ সামাজিক নাট্যরূপে পরিণত করে।

নিউয়ারি খাবারও সমান বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি নিউয়ারি থালিতে যেমন থাকে চালভাত, গুন্দ্রুক, আলু-টমেটোর আচার, বাফ মাংস ও সেল রুটি, তেমনই তার সঙ্গে থাকে স্থানীয়ভাবে তৈরি ‘থোন’ নামে মৃদু এলকোহলিক পানীয়। চোয়েলা নামের ঝাল ও সেঁকা মাংস এবং যোমারির মতো চালের গুড় ভরা মিষ্টান্ন তাদের রান্নায় উৎসবের রং যোগ করে।

উৎসব তো তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্দ্রযাত্রায় জীবন্ত দেবী কুমারীকে রথে বসিয়ে নগর পরিভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটা নেপালের ধর্মীয় জীবনের এক জ্বলন্ত প্রতীক। বিস্কেট যাত্রা কিংবা সাপারির মতো উৎসবগুলোও মৃত আত্মীয়দের স্মরণ, নববর্ষ উদযাপন ও সামাজিক পুনর্মিলনের উপলক্ষ।

নিউয়ারি সমাজে নারীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সংসার, অর্থনীতি এবং সামাজিক সিদ্ধান্ত সবখানেই নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা যায়। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিউয়ারি সংস্কৃতিও চ্যালেঞ্জের মুখে। শহরের জীবন, পর্যটনের চাপ, আধুনিক পোশাক ও খাবারের হিড়িক তাদের প্রাচীন রীতিনীতিকে ক্রমশ পিছনে ফেলে দিচ্ছে।

তবুও নিউয়ারিরা নেপালের শিকড়। তারা কেবল অতীত নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতেরও ধারক। তাদের শিল্প, বিয়ে, খাবার ও উৎসব নেপালের মুখচ্ছবি গঠনে যে কী গভীর প্রভাব রেখেছে, তা সহজেই চোখে পড়ে।