চট্টগ্রাম: “মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ ২২ অক্টোবর, ৯ম বারের মতো দেশজুড়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপিত হলো।
এ উপলক্ষে চট্টগ্রামের জামাল খান প্রেস ক্লাব চত্বরে এক মানববন্ধন ও গণজমায়েতের আয়োজন করা হয়। বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট, পলিসি ইনফ্লুয়েন্স গ্রুপ-চট্টগ্রাম এবং ক্যাব চট্টগ্রামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং আইনের কঠোর ও নিরপেক্ষ প্রয়োগের ওপর জোর দেন।
পলিসি ইনফ্লুয়েন্স গ্রুপ চট্টগ্রামের সভাপতি ও বিশিষ্ট কলামিস্ট মুহাম্মদ মুসা খানের সভাপতিত্ব করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কেবল চালক ও হেলপার একা দায়ী নন। এর সাথে যাত্রী, সড়কের অবকাঠামো, ফুটপাত দখল এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাবও দায়ী। আইন প্রয়োগে ক্ষমতাসীন দল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতি অনীহা এবং বিমাতাসুলভ আচরণ আইন মানতে সাধারণ মানুষের অনাগ্রহের কারণ।
বক্তারা চট্টগ্রাম নগরীর যানজট এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র একা ফুটপাত উচ্ছেদে অভিযান চালালেও, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সিডিএ ও বিআরটিএ-সহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। ফলে সকালে হকার উচ্ছেদ হলেও বিকেলে তারা আবার ফুটপাত দখল করছে। নগরীর নতুন ব্রীজ, কর্নেলহাট, বহদ্দারহাট, বিমানবন্দর সড়ক, হালিশহর, দেওয়ানহাটসহ অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকলেও বিআরটিএ ও সিএমপি’র কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সড়কে প্রতিদিন বিপুল প্রাণহানি ঘটলেও কারো কোনো উদ্বেগ বা দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ট্রাফিক বিভাগকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় উল্লেখ করে বক্তারা অভিযোগ করেন, শ্রমিক সংগঠনগুলো আগের মতোই নতুন মোড়কে চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিস্টেম পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশ আগের অবস্থানেই থেকে যাবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে এবং যাত্রীদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। একই সাথে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা না করে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট পরা নিশ্চিত করতে এবং আইনের কঠোর প্রতিপালনের বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। প্রয়োজনে চালকদের সাথে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বক্তারা দুর্ঘটনাকে “সাধারণ ঘটনা” হিসেবে না দেখে এটিকে প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
বক্তারা আরও বলেন, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানো এবং মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার না করা রোড ক্র্যাশ বা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিহার করলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমে যাবে। নিরাপদ বা নিয়ন্ত্রিত গতি এবং সঠিক ও মানসম্মত হেলমেটের ব্যবহার সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
দৈনিক পূর্বদেশের বার্তা প্রধান আবু মোশারফ রাসেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ক্যাব চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি এম নাসিরুল হক, ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, রাজনীতিবিদ মিটুল দাস গুপ্ত, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী রোটারিয়ান এস এম আজিজ, অপকার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলমগীর, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক লায়লা ইয়াসমিন, অপরাজেয় বাংলাদেশ এর বিভাগীয় সমন্বয়কারী জিনাত আরা বেগম, পার্কের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম মান্না, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সাবেক সভাপতি নুর মোহাম্মদ চেয়ারম্যান, সাংবাদিক কমল চক্রবর্তী, ক্যাব সীতাকুন্ডের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন অনিক, এডাব চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোঃ ফোরকান, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি মোহাম্মদ শাহীন চৌধুরী, ক্যাব পাচলাইশের মাজেদ ভাষানী, যুব ক্যাব কর্ণফুলী উপজেলা সভাপতি আরফিন সুমন, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক আমজাদুল হক আয়াজ, সদস্য মোঃ সালমান রশীদ, সমাজকর্মী মুজিব উল্লাহ তুষার, অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক সাংবাদিক ওসমান জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি