Home সারাদেশ বরিশালে ভাইয়ের হাতে ভাই অন্ধ, স্তব্ধ গ্রাম

বরিশালে ভাইয়ের হাতে ভাই অন্ধ, স্তব্ধ গ্রাম

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বরিশাল: বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ঘটেছে এক অকল্পনীয় নৃশংসতা। টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত চাইতে গিয়ে বাবার সামনেই দুই ভাইয়ের হাতে অন্য ভাই চিরদিনের মতো হারালেন চোখের আলো। এ ঘটনায় গোটা গ্রাম স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে, আর প্রশাসনের কাছে দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি তুলছেন স্থানীয়রা।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবেরচর গ্রামে আশেদ ব্যাপারীর বাড়িতে। ভুক্তভোগী রিপন বেপারী (৩৬) আশেদ ব্যাপারীর সেজো ছেলে। তার অভিযোগ মেজো ভাই রোকন ব্যাপারী ও ছোট ভাই স্বপন ব্যাপারী মিলে তার চোখ উপড়ে নিয়েছে।

রিপনের ছেলে আব্দুর রহমান জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন আগে রোকন ব্যাপারীর কাছে ৩৫ লাখ টাকা ও ২০ ভরি স্বর্ণালংকার গচ্ছিত রাখেন। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে তিনি টাকা ফেরত চান। কিন্তু রোকন টাকা দিতে অস্বীকার করলে কথাকাটাকাটি হয়। রাত ১১টার দিকে রিপন বাড়ি ফিরলে আবার ঝগড়া বাধে।

এ সময় দাদা আশেদ ব্যাপারী নাকি ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেদের নির্দেশ দেন রিপনের চোখ তুলে ফেলতে। বাবার কথায় রোকন ও স্বপন মিলে নির্মমভাবে রিপনের দুই চোখ তুলে ফেলে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে। রিপনের ডাকচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

প্রথমে আহত রিপনকে গৌরনদীর আশুকাঠি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রিপনের দুই চোখই চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে।

তার স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামীকে ওরা বাঁচতে দিল না। টাকার জন্য চোখ তুলে নিল। এখন আমার বাচ্চারা কীভাবে বাবাহীন জীবনে চলবে?”

ভয়াবহ এ ঘটনায় সাহেবেরচর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “টাকার জন্য এমন অমানবিক ঘটনা ঘটতে পারে তা কখনো ভাবিনি। নিজের ভাইয়ের চোখ তুলে নেওয়া—এটা মানুষ নয়, শয়তানের কাজ।”

এক প্রতিবেশী জানান, রিপন শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। পারিবারিক বিশ্বাস থেকেই টাকা ও স্বর্ণালংকার ভাইয়ের কাছে রেখেছিলেন। অথচ সেই বিশ্বাসই তার জীবনে অন্ধকার নেমে আনলো।

মুলাদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাসুদ বলেন, “পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে দুই ভাই মিলে রিপনের চোখ উপড়ে নিয়েছে।” তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত আশেদ ব্যাপারী, রোকন ও স্বপন বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। গ্রামের এক নারী বলেন, “এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। আমরা চাই কঠোর শাস্তি।”

মানবিক এই বিপর্যয় শুধু রিপন বেপারীর জীবনের আলো নিভিয়ে দেয়নি, বরং একটি পরিবারের ভরসার স্তম্ভ ভেঙে দিয়েছে। এখন গোটা সমাজের চাওয়া—ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হোক এবং এই অমানবিকতার জবাব পাওয়া যাক।

👉নৃশংস এ ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সোচ্চার হোন, অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আপনার কণ্ঠস্বর তুলুন।