Home Second Lead গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে নৌ ডাকাতদের হামলা

গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে নৌ ডাকাতদের হামলা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মুন্সিগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার দুর্গম চরাঞ্চলে সদ্য চালু হওয়া একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পকে লক্ষ্য করে নৌ ডাকাতদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ওপর গোলাগুলি এবং ককটেল নিক্ষেপের এই ঘটনার সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় শতাধিক রাউন্ড গুলির বিনিময় হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল সোয়া পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার বাড়ির পাশে পুলিশ ক্যাম্প। বিকেলের প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি পুলিশ ও ডাকাত দলের মধ্যে গোলাগুলি চলছে। এতে আমাদের গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকা থমথমে হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ ভয়ে ঘরে অবস্থান করছে।”

ঘটনার সময় ৫–৬টি দ্রুতগতির ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে নয়ন, পিয়াস ও রিপনের নেতৃত্বে ৩০–৪০ জনের একটি নৌ ডাকাত দল পুলিশ ক্যাম্পের কাছে মহড়া শুরু করে। ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ডাকাতদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে নদীতে অভিযানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। পুলিশের প্রস্তুতির বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে ডাকাত দল চাঁদপুরের বেলতলীর দিকে আড়ালে চলে যায়।

কিছু সময় পর বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ডাকাতরা হেলমেট পরে, আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি এবং ককটেল নিয়ে ক্যাম্পের দিকে ধাওয়া করে। তারা ক্যাম্পের পুলিশকে লক্ষ্য করে একের পর এক ককটেল নিক্ষেপ এবং গুলি চালায়। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এতে ডাকাতদের পক্ষ থেকে প্রায় ১০০টি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ২০টির মতো রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি চলে। শেষে পুলিশের শক্তিশালী প্রতিরোধের মুখে ডাকাতরা ট্রলার নিয়ে মতলবের দিকে চলে যায়।

গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ জানান, “ডাকাতদের হাতে থাকা অস্ত্রগুলো থানা থেকে লুট করা হয়েছে। তারা আমাদের লক্ষ্য করে প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে প্রায় ১৯–২৪ রাউন্ড গুলি করা হয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্য আহত হয়নি। তবে কোনো ডাকাত আহত হয়েছে কি না তা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না।”

স্থানীয়রা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে গুয়াগাছিয়ার মেঘনা নদী ও শাখা নদীতে নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনী অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা, নৌযানে চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। গত এক বছরে নদীতে কয়েক দফা গোলাগুলির সময় ডাকাত পক্ষের সর্দার বাবলা নিহত হয়েছেন। এক মাস আগে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ার সময় আবদুল মান্নান এবং হৃদয় আহমেদ নামের আরও দুইজন নিহত হন।

এই সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার জামালপুর গ্রামে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয়। ৪০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে, দুজন উপপরিদর্শকসহ ওসি মো. আনোয়ার আলম আজাদ নেতৃত্বে ক্যাম্পটি পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশ ক্যাম্প চালুর পর অনেক পরিবার পুনরায় গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে ডাকাত দলের সদস্যরা এখনও ভয় দেখাতে ও হামলা চালাতে তৎপর।

মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, “নৌ ডাকাতরা পুলিশের উপস্থিতিতে আর সুবিধা করতে পারছে না। সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্ত থাকুক, পুলিশ তাদের পাশে রয়েছে। আমরা সব ডাকাত ও সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে অপরাধমুক্ত এলাকা গড়ে তুলব।”