Home সারাদেশ সিরাজগঞ্জে ৭১ টন চাল কেলেঙ্কারি: রাজনীতি ও ব্যবসার অশুভ জোট?

সিরাজগঞ্জে ৭১ টন চাল কেলেঙ্কারি: রাজনীতি ও ব্যবসার অশুভ জোট?

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: হতদরিদ্রদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের। কিন্তু সেই দায়িত্বের চাল গিয়েছিল গোপন গুদামে, ব্যবসায়ী আর রাজনীতিকদের আঁতাতে। সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জে সেনা নেতৃত্বাধীন এক অভিযানে এমনই চিত্র ধরা পড়ে ১ টন সরকারি চাল জব্দ হয়, গ্রেপ্তার হন ছাত্রদলের সাত নেতাকর্মী। ঘটনা শুধু অনিয়মের নয়, এটা এক গভীর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির চিত্র।

বৃহস্পতিবার রাত। শহরের মালসাপাড়ার মেসার্স নর্থ বেঙ্গল ফ্লাওয়ার মিলে হঠাৎ হাজির সেনাবাহিনী, সঙ্গে প্রশাসন ও পুলিশ। সেখানে ৬৫ টন চাল পাওয়া যায়, যা গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ ছিল। একই সময় রায়গঞ্জের চিরামপুরে আরেকটি গুদামে পাওয়া যায় আরও ৬ টন চাল।

এই দুই জায়গা থেকেই জব্দ করা হয় সরকারি ট্যাগ লাগানো ন্যায্যমূল্যের চাল, যার স্থান হওয়ার কথা ছিল ইউনিয়ন পর্যায়ের খাদ্য গুদামে, না যে মিলে, না যে ব্যক্তিগত গুদামে।

কারা জড়িত?

এই অভিযানে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা সবাই ছাত্রদলের বিভিন্ন স্তরের নেতা। গ্রেপ্তাররা হলেন—জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কলেজ ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা এবং তাদের সহযোগী দুই যুবক।

প্রশ্ন উঠছে কীভাবে রাজনৈতিক দলের এসব নেতাকর্মী এত পরিমাণ সরকারি চালের সঙ্গে যুক্ত হলেন? তারা কি সরাসরি মজুতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, না কি কোনো রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কাজটি হচ্ছিল?

প্রশাসনের অবস্থান:

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন নিশ্চিত করেছেন, মেসার্স নর্থ বেঙ্গল ফ্লাওয়ার মিলে পাওয়া চাল সরকারিভাবে বরাদ্দ করা হয়েছিল। মালিক ইয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তবে মিল থেকে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ মূল মালিক এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

অন্যদিকে, রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলছেন, আটকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ছাত্রদলের প্রতিক্রিয়া:

জেলা ছাত্রদল সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন, তবে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচির ব্যস্ততার কারণে বিস্তারিত জানতে পারেননি। এখন তদন্ত করে দলীয় অবস্থান জানানো হবে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া:

স্থানীয়রা বলছেন, বহুদিন ধরেই হতদরিদ্রদের বরাদ্দ চাল সঠিকভাবে বিতরণ হয় না। স্থানীয় রাজনীতিক ও বিত্তশালীদের যোগসাজশে এসব চাল বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। এবারও তেমনই এক সিন্ডিকেটের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

এক প্রবীণ স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “চাল চুরি নতুন কিছু নয়, তবে এবার যেভাবে ছাত্র রাজনীতির নাম উঠে এসেছে, তাতে সাধারণ মানুষ গভীরভাবে হতাশ।”


আপনার এলাকায় কি সরকারি সাহায্য প্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়? নিজের অভিজ্ঞতা জানান বিজনেসটুডে২৪.কম–এর ইনবক্সে বা মন্তব্যে।