ধারাবাহিক প্রতিবেদন: পবিত্র আহ্বানের পথে পর্ব-৮
মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: হজের মাহাত্ম্য যেমন অপরিসীম, তেমনি এতে হাজার হাজার মানুষের একযোগে উপস্থিতি, ভিড় এবং শারীরিক পরিশ্রমের কারণে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আজকের আধুনিক যুগে হজের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবায় নতুন প্রযুক্তি ও ব্যবস্থা চালু থাকলেও, হাজীদের ব্যক্তিগত সচেতনতা ও প্রস্তুতি অপরিহার্য।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও হজ:
হজের সময় দীর্ঘ পথযাত্রা, তীব্র গরম, ভিড় ও শারীরিক পরিশ্রম অনেক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও অসুস্থদের জন্য ঝুঁকি বেশি। গরম লাগা, পানিশূন্যতা, হাঁটার ক্লান্তি, সংক্রমণ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আর তাই, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে হাজীদের উচিত যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া। যথাযথ পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া এবং নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
আধুনিক চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
সৌদি সরকার হজের সময় হাজীদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। মক্কা-মদিনায় আধুনিক হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার এবং জরুরি সেবা ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে।
এছাড়া, ভিড় নিয়ন্ত্রণ, সিসিটিভি নজরদারি ও পুলিশের পর্যাপ্ত মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। চলাচলে সহায়তার জন্য বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও থাকে।
প্রযুক্তির ব্যবহার:
আজকের দিনে হজের সময় প্রযুক্তির সাহায্যে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হাজীদের স্বাস্থ্য মনিটরিং, জরুরি যোগাযোগ, গাইডলাইন প্রদান এবং স্থান নির্ধারণ সম্ভব।
হজ পরিচালনার জন্য উন্নত সফটওয়্যার ব্যবহার করে হাজীদের গাইড ও ট্র্যাকিং করা হয়, যা বিপদজনক পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা দেয়।
ব্যক্তিগত প্রস্তুতি ও সতর্কতা:
হাজীরা হজে যাওয়ার আগেই নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষ করে যাদের পুরোনো রোগ আছে, তারা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন। প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
শরীরের সংকেত বুঝে বিশ্রাম নেওয়া, যথেষ্ট পানি পান, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
শারীরিক অসুবিধা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নিতে দ্বিধা করা উচিত নয়।
হজের সময় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তি ও সরকারি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি হাজীদের ব্যক্তিগত সচেতনতা সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে। সঠিক প্রস্তুতি ও সতর্কতা থাকলে পবিত্র এই যাত্রা হবে সুষ্ঠু, সুস্থ এবং নিরাপদ।
হাজীরা যেন শুধু ইবাদত ও আত্মিক পরিশোধনে মনোনিবেশ করতে পারেন, তার জন্য স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা বিষয়ক ব্যবস্থা অপরিহার্য।
পরবর্তী পর্ব: হজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব — মুসলিম বিশ্বে হজের গুরুত্ব