Home First Lead জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে দিল পাথর শ্রমিকরা, পরিবেশ রক্ষায় সরকারের কঠোর...

জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে দিল পাথর শ্রমিকরা, পরিবেশ রক্ষায় সরকারের কঠোর অবস্থান

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: জাফলংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ ও খনিজসম্পদবিষয়ক দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে রেখে বিক্ষোভ করেছেন পাথর শ্রমিকরা। ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে গোয়াইনঘাট উপজেলার বল্লাঘাট এলাকা। শ্রমিকদের দাবি, রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন পাথর উত্তোলন বন্ধ হলে তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে।

শনিবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। সরকারের পক্ষ থেকে জাফলং ও আশপাশের এলাকায় পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় শত শত শ্রমিক, পাথর উত্তোলনকারী সংগঠনের কর্মী ও বাসিন্দারা উপদেষ্টাদের গাড়িবহরের গতিরোধ করেন। প্রায় আধাঘণ্টা তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চালান।

উল্লেখ্য, শনিবার সকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সরেজমিনে জাফলং ইসিএ (Ecologically Critical Area) এলাকা পরিদর্শনে আসেন। সেখানে পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকার জাফলংয়ে আর কোনো পাথর কোয়ারি খুলবে না, বরং এখানকার ধ্বংসপ্রাপ্ত পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও পর্যটন খাতকে টেকসইভাবে গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেবে।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে জাফলংয়ের পরিবেশ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখান থেকে সমস্ত ক্রাশার মেশিন সরিয়ে ফেলা হবে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তিনি বলেন, “বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা উচিত, তবে এখানে তো প্রশ্নই ওঠে না—অবৈধভাবে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে।”

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জাফলং একটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। এখানে আর কোনো ইজারা দেওয়া হবে না। আমরা ট্যুরিজম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি কীভাবে পরিবেশবান্ধব পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা যায়।”

এই ঘোষণার পরপরই স্থানীয় শ্রমিকদের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। তারা দাবি করেন, উপদেষ্টারা পাথর শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার দিকটি বিবেচনায় না নিয়েই একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এক বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, সরকার আমাদের ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেবে। কিন্তু আমাদের না শুনে দালালদের কথায় উপদেষ্টারা চলে গেলেন। আমরা শুধু ভাত আর কাপড় চাই।”

তবে গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “গাড়ি আটকানো হয়নি। সেখানে সাংবাদিক ও শ্রমিকরা ছিলেন। উপদেষ্টারা গাড়িতে উঠেই চলে যান। বল্লাঘাট এলাকায় শ্রমিকরা দাবি জানিয়েছিল।” ভিডিও ফুটেজে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান ও গাড়ি ঘিরে রাখা দেখা গেলেও ওসি জানান, তিনি ঘটনাস্থলে কিছুটা দূরে ছিলেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা দ্রুত সক্রিয় হন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজাউল নবী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের অবস্থান পরিবেশ রক্ষায় যথার্থ হলেও, একসঙ্গে পাঁচ লাখ শ্রমিকের বিকল্প কর্মসংস্থান না করে এ ধরনের হঠাৎ সিদ্ধান্ত বড় ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। এখনও পর্যন্ত বিকল্প কর্মসংস্থানের রূপরেখা কিংবা প্রকল্পের ঘোষণা আসেনি, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা।