Home সারাদেশ তানোরে ৩৫ ফুট গভীর পাইপে আটকা শিশু সাজিদ: চলছে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান

তানোরে ৩৫ ফুট গভীর পাইপে আটকা শিশু সাজিদ: চলছে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান

ছবি: সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের (ডিপ টিউবওয়েল) পাইপের প্রায় ৩৫ ফুট গভীরে আটকা পড়েছে দুই বছরের শিশু মো. সাজিদ। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট উত্তরপাড়া গ্রামে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ও স্থানীয় প্রশাসন শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান পরিচালনা করছে।

উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, পাইপের ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে এবং শিশুটি এখনো সাড়া দিচ্ছে। তবে মাটির গভীরতা এবং পাইপের সরু ব্যাসের কারণে উদ্ধারকাজ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঘটনাস্থলের বর্তমান পরিস্থিতি
শিশু সাজিদ ওই গ্রামের বাসিন্দা রাকিবের ছেলে। তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান জানান, বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশে খেলার সময় অসাবধানতাবশত শিশুটি সেখানে থাকা পরিত্যক্ত টেস্ট বোরিংয়ের পাইপের ভেতরে পড়ে যায়।

খবর পেয়ে তানোর ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষণিক উদ্ধারকাজ শুরু করে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় রাজশাহী সদর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিশেষায়িত উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে যোগ দিয়েছে। ওসি জানান, নলকূপটির বোরিংয়ের গভীরতা অনেক বেশি হলেও শিশুটি ৩৫ ফুট গভীরে আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে উদ্ধারে বর্তমানে ‘প্যারালাল এক্সকাভেশন’ বা সমান্তরাল মাটি খনন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ পাইপের পাশ দিয়ে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়ে শিশুটির কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ফিরে দেখা: অতীতে যেভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল পাইপে পড়া শিশুদের
বাংলাদেশে এবং বহির্বিশ্বে এর আগেও বেশ কয়েকবার শিশুরা সরু পাইপ বা গর্তে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনায় উদ্ধারকাজের পদ্ধতি ও ফলাফল ছিল ভিন্ন ভিন্ন।

১. জিহাদ (২০১৪, শাহজাহানপুর, ঢাকা):
ঢাকায় রেলওয়ে কলোনিতে প্রায় ৬০০ ফুট গভীর পাইপে পড়ে গিয়েছিল শিশু জিহাদ। সে সময় ফায়ার সার্ভিস দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় কয়েকজন যুবক নিজেদের তৈরি একটি ‘ক্যাচার’ বা খাঁচা সদৃশ যন্ত্র ব্যবহার করে তাকে তুলে আনেন। যদিও উদ্ধারের পর শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সেই ঘটনায় ব্যবহৃত পদ্ধতিটি ছিল—লোহার খাঁচাটি নিচে নামিয়ে শিশুটিকে তার ভেতরে আটকে উপরে টেনে তোলা।

২. নীরব (২০১৫, কদমতলী, ঢাকা):
কদমতলীতে পয়োনিষ্কাশন নালার ম্যানহোলে পড়ে যায় শিশু নীরব। সেখানে পানির স্রোত থাকায় উদ্ধারকাজ ছিল অত্যন্ত জটিল। ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ডুবুরিরা দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। এক্ষেত্রে পাইপের ভেতর দিয়ে ‘ক্রলিং’ বা হামাগুড়ি দিয়ে এবং পাইপের প্রবাহ যাচাই করে উদ্ধারকাজ চালানো হয়েছিল।

৩. আন্তর্জাতিক উদাহরণ (মরক্কোর রায়ান, ২০২২):
মরক্কোতে ৫ বছর বয়সী শিশু রায়ান প্রায় ১০০ ফুট গভীর কূয়ায় পড়ে যায়। তাকে উদ্ধারে বর্তমানে তানোরে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে, অনেকটা সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়েছিল। অর্থাৎ কূয়ার পাশ দিয়ে পাহাড় কেটে সমান্তরাল পথ তৈরি করা হয়। যদিও টানা ৪ দিন চেষ্টার পর রায়ানকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, কিন্তু কম গভীরতায় (৩০-৪০ ফুট) এই ‘প্যারালাল ডিগিং’ বা পাশ দিয়ে মাটি খোঁড়া পদ্ধতিটি সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এতে পাইপের ভেতরে থাকা শিশুটির ওপর মাটি ধসে পড়ার ঝুঁকি কমে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মত
উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, তানোরে শিশু সাজিদ ৩৫ ফুট গভীরে থাকায় ভেকু দিয়ে মাটি খুঁড়ে তাকে বের করা সম্ভব। এটি জিহাদের ঘটনার মতো অত্যধিক গভীর নয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন খোঁড়ার সময় কম্পনে পাইপটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বা শিশুটি আরও নিচে পড়ে না যায়।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, শিশু সাজিদকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ঘটনাস্থলে শত শত উদ্বিগ্ন জনতা ভিড় করেছেন।