Home First Lead যুদ্ধবিরতির মধ্যেই শ্রীনগরে বিস্ফোরণ: শান্তির সম্ভাবনায় ফাটল

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই শ্রীনগরে বিস্ফোরণ: শান্তির সম্ভাবনায় ফাটল

বিস্ফোরণের পর ব্ল্যাক আউট।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শ্রীনগরের আকাশে দপ করে জ্বলে উঠল বিস্ফোরণের আলো। এতে করে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সদ্য ঘোষিত শান্তির ইঙ্গিত মুহূর্তেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, “এই যুদ্ধবিরতির কী হলো? শ্রীনগর জুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।” তার এই পোস্টেই নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে উপত্যকায়।

একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরেও ১১টি জায়গায় তা লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। উধমপুর, পুঞ্চ, আখনুর, বারমের-সহ ১১টি জায়গায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে ফের ডাল লেক, শ্রীনগর, উধুমপুর, বারমেরে ব্ল্যাক আউট করা হয়েছে। পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জেরে পাঞ্জাব ও রাজস্থান জুড়ে ব্ল্যাক আউট করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এক ঘোষণায় জানান, “দীর্ঘ এক রাতের আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।” এই চুক্তির মাধ্যমে গত মাসের গণহত্যাজনিত সহিংসতার জের ধরে সীমান্তে চলা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ হওয়ার কথা ছিল।

দিনভর দুই দেশের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনায় পরিস্থিতি পৌঁছে গিয়েছিল সরাসরি সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং বলেন, “পাকিস্তান যদি একইভাবে সাড়া দেয়, তাহলে ভারত কোনো রকম উত্তেজনা চায় না।”

অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে, “ভারতের বিনা উসকানির বেআইনি আগ্রাসনে আমাদের সীমান্তের একাধিক স্থানে হামলা হয় ও বেসামরিক লোকজন নিহত হয়।” যদিও ইসলামাবাদ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা মেনে নেওয়ার পাশাপাশি ‘গঠনমূলক কূটনীতি ও পূর্ণাঙ্গ আলোচনার’ ওপর জোর দেয় এবং কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আলোচনার মাধ্যমে পথ খুঁজতে চায়।

বিশ্বশক্তিগুলোর তৎপরতা:

এই অস্থির পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কূটনীতি জোরদার হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক ও কূটনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তড়িঘড়ি আলাপে অংশ নিয়ে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি।

চীনও অবস্থান স্পষ্ট করে পাকিস্তানের পক্ষেই সুর চড়িয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইসলামাবাদের ‘ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ’-এর প্রশংসা করে বলেন, “সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চীন পাকিস্তানের পাশে থাকবে।” তবে ওয়াং ই-এর এই বিবৃতি যুদ্ধবিরতির আগে, না পরে—তা নিয়ে স্পষ্টতা পাওয়া যায়নি।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মধ্যেও নতুন করে শ্রীনগরে বিস্ফোরণের ঘটনা আবারও এই প্রশ্ন তুলছে—দুই দেশের মধ্যে সত্যিই কি শান্তি সম্ভব, না কি কাশ্মীর আবারও হয়ে উঠছে উপমহাদেশীয় উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু?