বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশ এক সময় বিশ্বের ২৯টি দেশে কাঁচাপাট রপ্তানি করত। তবে গত দুই দশকে এই বাজারের বড় অংশ হারিয়েছে। বর্তমানে রপ্তানি হচ্ছে মাত্র ১২টি দেশে। বিশেষ করে দৌলতপুর ও নারায়ণগঞ্জের পাট ব্যবসায়ীরা মন্দাভাবের মধ্যে রয়েছে। ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হওয়া, মৌসুম শুরু হলেও ঋণ না পাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া মিলিয়ন কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।
বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশন ও পাট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইতালি, রাশিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ইরান, নেপাল, স্পেন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি সহ ২৯টি দেশে রপ্তানি হতো। বর্তমানে রপ্তানি সীমিত ১২টি দেশে, যার মধ্যে ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহারের পরিবর্তন ও সমুদ্রপথে রপ্তানির কারণে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হারা দেশের তালিকায় রয়েছে বেলজিয়াম, কিউবা, মিশর, এল-সালভাডোর, ইথিওপিয়া, জার্মানি, হল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, তানজানিয়া, জায়ার, রোমানিয়া ও ফিলিপাইন। বর্তমানে রপ্তানি হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, তিউনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আইভরি কোস্ট, থাইল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
পাট রপ্তানিকারকরা মনে করছেন, বাজার হারানোর পেছনে মূল কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, দফায় দফায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা, করোনা মহামারি এবং ডলারের মূল্য ওঠানামা। গাজী জুট ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানিকারক গাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের মান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৯-২০১০ সালের পর দুই-তিন দফায় রপ্তানি বন্ধ হয়েছে। যেসব দেশ বাংলাদেশের পাটে নির্ভরশীল, তাদের মিলগুলো বন্ধ হওয়ায় বাজার কমেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগে সড়কপথে ভারত রপ্তানি হতো, এখন জলপথে জাহাজে পাঠাতে সময় ও খরচ বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভারতের ব্যবসায়ীরা। কয়েকগুণ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়ছে।”
দৌলতপুর সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানিকারক বদরুল আলম মার্কিন বলেন, “বাজারে চাহিদা কমেছে। অনেক দেশের মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রপ্তানি কমছে। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল বাংলাদেশের পাটের সবচেয়ে বড় বাজার।”
আর্থিক দিক থেকেও রপ্তানি হ্রাসের প্রভাব স্পষ্ট। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ২১ লাখ ১২ হাজার ৪০০ বেল পাট রপ্তানি হয়ে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মে পর্যন্ত ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৯ বেল পাট রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য ১ হাজার ৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক-চতুর্থাংশ রপ্তানি হয়েছে।
বিজেএর চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ আকন্দ বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শুরু থেকে রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন দেশের মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা বাজার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি। ভারতীয় স্থলবন্দর ব্যবহারের পরিবর্তন ও সমুদ্রপথে জাহাজে পাঠানোর কারণে খরচ বেড়েছে, তবে এতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মুখে পড়ছে।”
বর্তমানে দৌলতপুর ও নারায়ণগঞ্জে পাট ব্যবসায়ীরা মৌসুম শুরুর পরও ঋণ না পাওয়ার কারণে সীমিত কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি ব্যাংকের ঋণ খেলাপি এবং ব্যবসায়িক ক্ষতি আরও বাড়াচ্ছে।
বিশ্ববাজারে মানসম্মত পাট উৎপাদন সত্ত্বেও রপ্তানির বাধা এবং আন্তর্জাতিক চাহিদার পরিবর্তন বাংলাদেশের কাঁচাপাট শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা আশা রাখছেন, নতুন বাজার অন্বেষণ ও কার্যকর নীতি গ্রহণের মাধ্যমে রপ্তানি পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।
CTA: এই প্রতিবেদন শেয়ার করুন এবং মন্তব্যে জানান, কীভাবে বাংলাদেশের কাঁচাপাট শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে পুনরায় শক্তিশালী করা যায়।