বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মালিক-শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক সংহতির মধ্য দিয়ে এখন এই ইস্যুটি শুধু একটি জীবিকার প্রশ্ন নয়, হয়ে উঠেছে পরিবেশ, প্রশাসনিক নীতি ও সামাজিক ভারসাম্যের জটিল দ্বন্দ্ব।
গত ২৪ জুন সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক বিশাল মানববন্ধনে এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে উপস্থিত হন সহস্রাধিক শ্রমিক, সংগঠক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা এই সমাবেশে অংশ নিয়ে পাথরমহাল পুনরায় খুলে দেওয়ার দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
দাবি ও কর্মসূচি
সমাবেশে নেতারা সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দাবি না মানলে আগামী ২৮ জুন থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলনের সূচনা হবে। এরপর ৩০ জুন থেকে জেলায় সকল পণ্য পরিবহনে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি এবং ২ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণপরিবহনসহ সব পরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সমাবেশে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের বক্তব্যে উঠে আসে, বছরের পর বছর ধরে পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ঋণে জর্জরিত, পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
পরিবেশগত দিক ও সরকারের অবস্থান
তবে এই মানবিক দাবির পেছনে রয়েছে এক গভীর পরিবেশগত সংকট। পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত বোমা মেশিন ও ভারী যন্ত্রপাতির কারণে জাফলংসহ আশপাশের এলাকার নদী, জীববৈচিত্র্য ও বায়ু দূষণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর জেরে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাও এই ইজারা স্থগিতের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরিবেশবাদী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জ্বালানি উপদেষ্টা সম্প্রতি জাফলং পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোর পরিবেশগত ঝুঁকি এতটাই গুরুতর যে, সেগুলোর আর ইজারা দেওয়া হবে না। এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা।
রাজনৈতিক সংহতির নতুন মাত্রা
সাম্প্রতিক মানববন্ধনের ব্যতিক্রমী দিক হলো—প্রথমবারের মতো বড় রাজনৈতিক দলগুলো শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। এতে পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় আন্দোলন এখন বৃহত্তর চাপ তৈরির পথে।
সিলেটের পাথর কোয়ারি নিয়ে জটিলতা শুধু জীবিকার প্রশ্ন নয়, এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশ সুরক্ষা, সরকারি সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক অবস্থানের এক সমান্তরাল সংঘাত। সরকার যদি কেবল পরিবেশগত চিন্তাকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ উপেক্ষিত থেকে যাবে। আবার শুধুমাত্র জীবিকার জন্য পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলে ধ্বংস হবে প্রকৃতি। এই সংকট নিরসনে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক সমন্বিত নীতি ও সর্বপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান।
গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে আরও ৭৭টি স্টোন ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বুধবার দ্বিতীয় দিনের মত এ অভিযান পরিচালনা করে টাস্কফোর্সের আভিযানিক টিম।
