
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিদি, সিলেট: সিলেট অঞ্চলে বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারিগুলো পুনরায় চালুর দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। আগামী শুক্রবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে শনিবার থেকে ধর্মঘটে যাবেন তারা। এই ঘোষণার মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনৈতিক অস্থিরতা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বুধবার দুপুরে সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা জানান, পাথর খাতকে কেন্দ্র করে হাজারো শ্রমিক ও শত শত ব্যবসায়ী বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে কোয়ারিগুলো বন্ধ থাকায় আয়-রোজগারের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
সমাবেশে পাথরসংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা জানান, তাদের পাঁচ দফা দাবি হলো, বন্ধ থাকা কোয়ারিগুলো চালু করতে হবে, ক্রাশার মেশিন ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করতে হবে, পাথরবাহী ট্রাক জব্দ করা যাবে না, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং সিলেটের জেলা প্রশাসককে অপসারণ করতে হবে।
এই বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, শ্রমিক ও মালিকদের দাবি একেবারেই ন্যায্য ও যৌক্তিক। সরকার যদি দ্রুত কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে সিলেটের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখা জরুরি, তবে সেই সঙ্গে হাজারো শ্রমিকের জীবন-জীবিকাও রক্ষা করতে হবে। পরিবেশসম্মতভাবে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হোক, এটাই এখন সময়ের দাবি।
বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন একতরফাভাবে অভিযান চালিয়ে শ্রমিকদের বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির নামে তাদের উপার্জনের পথ কেটে দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক অভিযানে একের পর এক ক্রাশার মেশিন ধ্বংস, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং পাথর জব্দ করা হচ্ছে।
গত ৩০ জুন কোম্পানীগঞ্জে অভিযানে ১৭টি মেশিন ধ্বংস, ১০টি মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং এক লাখ ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এর আগেও একাধিক দিনে জাফলংয়ে শতাধিক যন্ত্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২০ সালে কোয়ারি বন্ধ হলেও রাতের আঁধারে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধভাবে উত্তোলন চলেছে। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নিয়ন্ত্রণ অন্য পক্ষের হাতে গেলে নতুন করে উত্তোলন শুরু হয়।
এই প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকারীরা বলছেন, অবৈধ নয় বরং সুষ্ঠু ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে পরিবেশসম্মত পাথর উত্তোলনের অনুমতি না দিলে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।