Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য ইতিহাসের ধ্বংসস্তূপে জমে থাকা স্মৃতি: পানাম নগর

ইতিহাসের ধ্বংসস্তূপে জমে থাকা স্মৃতি: পানাম নগর

পানাম নগর। সংগৃহীত ছবি
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননগরী পানাম নগর। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত এই নগরী একসময় ছিল বাণিজ্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। আজ সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও ইতিহাস আর স্থাপত্যের সৌন্দর্যে এখনো মুগ্ধ করে হাজারো দর্শনার্থীকে।

বাণিজ্যের স্বর্ণযুগ

ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওকে ঘিরে গড়ে ওঠে পানাম নগর। তখন মসলিনসহ নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন ও বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল এই এলাকা। মোগল আমলে পানাম নগর ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের প্রধান আবাসস্থলে পরিণত হয়। মূলত হিন্দু ধনী ব্যবসায়ীরাই এখানে বসতি গড়েছিলেন।

ইউরোপীয় স্থাপত্যের ছোঁয়া

পানাম নগরের স্থাপত্যে ইউরোপীয় ধারা ও বাংলার দেশজ রীতির এক অনন্য মিশেল দেখা যায়। এখানে প্রায় ৫০টির মতো দৃষ্টিনন্দন ভবন রয়েছে, যেগুলোর নকশায় রেনেসাঁ যুগের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশাল খিলান, অলঙ্কৃত বারান্দা, জানালার কাঠের কারুকাজ ও লাল ইটের দেয়াল আজো দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

পতনের ইতিহাস

ঔপনিবেশিক শাসন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধাক্কায় পানাম নগরের জৌলুস ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বহু ব্যবসায়ী দেশত্যাগ করেন। ফলে জনবসতি কমে যায় এবং নগরী পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভবনগুলো ভেঙে পড়তে শুরু করে, আর পানাম নগর পরিণত হয় এক ইতিহাসের ধ্বংসাবশেষে।

পর্যটকদের আকর্ষণ

বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে পানাম নগর। সোনারগাঁও জাদুঘর ও লোকশিল্প জাদুঘরের সঙ্গে এটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন, বিশেষ করে ছুটির দিনে। ইতিহাসপ্রেমী, স্থাপত্যবিদ, গবেষক এবং সাধারণ দর্শনার্থীদের কাছে এটি এক অমূল্য ঐতিহ্য।

সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ

ভবনগুলো বয়সের ভারে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আবার অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, ভাঙচুর ও অবহেলায় ধ্বংসের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মানে সংরক্ষণ কার্যক্রম চালু না হলে পানাম নগরের অবশিষ্ট স্থাপত্য হারিয়ে যাবে। এ কারণে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও উঠেছে বহুবার।

পানাম নগর কেবল একটি নগরীর নাম নয়, এটি বাংলার ইতিহাস, স্থাপত্যশিল্প ও বাণিজ্য সমৃদ্ধির প্রতীক। আজ এটি ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকলেও, অতীতের গৌরবময় স্মৃতিচারণে পানাম নগর আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
বাংলার ঐতিহ্য সংরক্ষণে উদ্যোগ বাড়লে এই নগরী শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।